ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সুপেয় পানি ও ওয়াশরুম সমস্যায় ধুঁকছে বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

বুটেক্স সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ২৮ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১২:২০, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
সুপেয় পানি ও ওয়াশরুম সমস্যায় ধুঁকছে বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) ক্লাসরুমের সংকট নিরসন এবং শিক্ষার পরিবেশ বিস্তৃতির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের বঙ্গবন্ধু ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় এবং সে বছরই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দুই বছর আগে ভবনটিতে শুরু হয় নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বেশিরভাগই চলে এখানে। তবে ভবনটিতে রয়েছে নানা সমস্যা।

সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকা, ওয়াশরুমের নানা সমস্যা এবং সেগুলোর সঠিক তদারকির অভাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তীব্র তাপদাহে মৌলিক চাহিদা পানির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বারবার বলার পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। আবার কিছু ক্ষেত্রে সমাধান করলেও তা কিছুদিনের মধ্যে আবারও নষ্ট হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটিতে প্রতিটি ফ্লোরে সুপেয় পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা থাকলেও অকেজো হয়ে পড়ে আছে ট্যাপগুলো। এতে পানির জন্য এক ফ্লোরের শিক্ষার্থীদেরকে অন্য ফ্লোরে যাওয়া লাগছে। আবার প্রতিটি ফ্লোরের ওয়াশরুমে হাই-কমোড ও লো কমোডের ফ্ল্যাশ ও ওয়াটারগান কাজ করে না এবং লাইটও নষ্ট।

ওয়াশরুমগুলোতে নেই সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ, টিস্যু পেপার, টাওয়েলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে অপরিচ্ছন্ন টয়লেট থেকে নির্গত হচ্ছে দুর্গন্ধ, যা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে।

ছেলেদের ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড ফ্লোর, দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও দশম তলা এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড ফ্লোর, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় খাবার পানির ফিল্টার নষ্ট পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে খাবার পানির ট্যাপ সংলগ্ন বেসিনও নষ্ট পাওয়া গেছে। ক্যান্টিনের ওয়াশরুমে ১১টি বেসিনের মধ্যে পাঁচটিই নষ্ট। প্রতিটি ফ্লোরে ছেলে-মেয়েদের আলাদা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকলেও ক্যান্টিনের হাত ধোয়ার ওয়াশরুমটা একই হওয়ায়, তা অনেকের কাছে বিব্রতকর মনে হয়েছে।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, ছেলেদের ওয়াশরুমের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় তলায় সবগুলো ফ্ল্যাশ ও ওয়াটার গান নষ্ট, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রত্যেকটিতে ছয়টি কমোডের মধ্যে চারটি কমোডের ফ্ল্যাশ নষ্ট, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ছয়টি কমোডের মধ্যে প্রতিটিতে একটি করে ফ্ল্যাশ ও দুটি করে ওয়াটার গান নষ্ট, সপ্তম তলায় একটি ফ্ল্যাশ ও একটি ওয়াটার গান নষ্ট, অষ্টম তলায় তিনটি ফ্ল্যাশ ও দুটি ওয়াটার গান নষ্ট, নবম তলায় দুটি ওয়াটার গান এবং দশম তলায় দুটি ফ্ল্যাশ ও দুটি ওয়াটার গান নষ্ট।

মেয়েদের ওয়াশরুমে গ্রাউন্ড ফ্লোরে চারটি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফ্লোরে তিনটি করে, চতুর্থ তলায় একটি, পঞ্চম তলায় দুটি, ষষ্ঠ তলায় তিনটি, সপ্তম তলায় একটি, অষ্টম তলায় চারটি, নবম তলায় পাঁচটি ও দশম তলায় একটি ফ্ল্যাশ নষ্ট পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে ওয়াটার গানসহ ওয়াশরুমের লাইটও নষ্ট পাওয়া গেছে।

এসব সমস্যা নিয়ে ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৈয়বা ভূঁইয়া বলেন, তীব্র গরমে বেশিরভাগ সময় ফিল্টারে পানি না থাকায় তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দীর্ঘ সময় ক্লাস করে খুবই ক্লান্ত লাগে। নামমাত্র একটা হ্যান্ডওয়াশ থাকলেও নেই কোনো টিস্যু বা পেপার টাওয়েলের ব্যবস্থা। এছাড়া বাজে দুর্গন্ধ তো রয়েছেই। রোজার বন্ধের পর বেসিন থেকেও বের হচ্ছিল ময়লা পানি।

একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, অজুতে পা ধোয়ার জন্য নিচু কল থাকলে অনেক ভালো হতো। যদিও নিচ তলার কমন রুমের পাশে একটা অজুখানা আছে। তবে ওইটা খুব নোংরা থাকে। আবার ক্লাসের ফাঁকে হলে গিয়ে অজু করে নামাজ পড়ে আসার মত সময়ও থাকে না।

৪৮তম ব্যাচের ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অঙ্গন রায় জানান, ভার্সিটি খোলার পর থেকে পানি পাইনি ফিল্টার থেকে। আজও খেতে গেলাম, দেখি পানি আসে না। এই পিচ গলা, চামড়া পুড়ে যাওয়ার মতো গরমে সবাই যাতে ঠান্ডা পানি পায়, এর বাস্তবায়নটা দেখতে চাই আমরা।

অভিযোগগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এই বিষয়গুলো প্রতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দেখেন। বিভাগীয় প্রধান পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনকে অবগত করলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তারপরও আমি ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনে সমস্যা সমাধানের জন্য বলে দিবো। 

ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. আফজাল হোসেন বলেন, এসব সরঞ্জামাদি ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস সরাসরি ক্রয় করে না। আপনাদের সমস্যা সম্বলিত দরখস্ত বুটেক্সের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মহোদয়ের কাছে জমা দেন। পরিচালকের কাছ থেকে আমাদের এখানে ফরোয়ার্ড হলে আমরা সরেজমিনে এগুলো চেক করে একটি প্রতিবেদন স্যারের কাছে জমা দিবো। কারণ এগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস থেকে ক্রয় হয় না।

/সাজ্জাদ/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়