‘আমার আয়ুর কিছু অংশ যদি মাকে দিতে পারতাম!’
হাসান মাহমুদ শুভ || রাইজিংবিডি.কম

মা, পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম শব্দের দীর্ঘতম অনুভূতির নাম। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, ‘মা’ মানে কি? আমি নিশ্চিন্তে বলব, ‘মা মানে, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও নির্ভরতার জায়গা।’
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’। এ দিনটিকে ঘিরে মা’দের নিয়ে থাকে নানা আয়োজন-উৎযাপন। মাকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান দেখানোর জন্য কোনো বিশেষ দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবুও একটা বিশেষ দিন থাকুক, যেটা বিশেষভাবে রাঙিয়ে তোলা যায়।
একজন সন্তানের জন্য ‘মা’ কত বড় আশীর্বাদ, তা ভাষার প্রকাশ করা যাবে না। পৃথিবীর একমাত্র স্বার্থহীন সম্পর্ক হচ্ছে সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক। মাকে নিয়ে লিখে শেষ করার সমার্থ আমার নেই। তবুও মা’কে নিয়ে লেখি। মনের মাধুরি মিশিয়ে বর্ণমালা দিয়ে মা’কে সাজাই। অপ্রকাশিত অনুভূতি সাজাই শব্দে, বর্ণে আর কবিতার ছন্দে। তবুও কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা থেকে যায়, আফসোস থেকে যায়। চাইলেও সব অনুভূতি শব্দের মাধ্যমে পূর্ণতা দেওয়া যায় না।
মাকে নিয়ে তাই তো কবি কাদের নেওয়াজ লিখেছিলেন- ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর, ত্রিভুবনে নাই।’ মাকে নিয়ে হাজারো কবি, সাহিত্যিক যুগে-যুগে লিখে গেছেন নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে।
জন্মের পর থেকে শুরু করে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রতিটি পর্যায়ে ‘মা’ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মায়ের হাতে ভর দিয়ে পদচারণা শুরু, মায়ের চোখে পৃথিবী দেখা, গল্প শোনা, কলম ধরে এলোমেলো কিছু লিখতে চেষ্টা করা। আবার কখনো একটু ভয় পেয়ে মুরগির ছানার মতো বুকের মধ্যে লুকিয়ে পড়া, খানিক বাদে বের হয়ে আবার আকাশ দেখা। এমন অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ মানুষটির সঙ্গে। মায়ের সঙ্গে সন্তানের জীবনের প্রতিটা পদে পদে জড়িয়ে থাকে হাজারো সুখকর স্মৃতি। সেই স্মৃতি আমাদের বাঁচতে শেখায়, সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে যাওয়ার ব্রত হিসেবে কাজ করে। দুঃখ-কষ্ট, ভালো ও খারাপ সময়ে মা’কে ভীষণ মনে পড়ে।
মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য বাসার বাহিরে চার বছর। মাঝেমধ্যে মনে হয় সবকিছু ছেড়ে মায়ের কাছে ছুটে যাই। পরক্ষণেই মনে হয়, আমি তো মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে আসছি। মায়ের স্বপ্ন মানে আমার স্বপ্ন। মায়ের মুখে হাসি মানে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বটবৃক্ষ বাবাকে নিয়ে অন্যদিন লিখব। একমাত্র সন্তান হওয়ায় তাদের পৃথিবীর সব ভালোবাসা আমি একাই পেয়েছি। মায়ের সঙ্গে তৈরি হয়েছে পাহাড়সম স্মৃতি! ছোটবেলা থেকেই বেশির ভাগ সময় মায়ের সঙ্গেই কেটেছে। যখন থেকে বুঝতে শিখি, তখন থেকে মায়ের শাড়ির আঁচল আমি ছাড়িনি।
মায়ের কোল আর আঁচল আমার সবচেয়ে শান্তির জায়গা। ইন্টারমিডিয়েটের আগ পর্যন্ত মাকে ছাড়া একা কোনো আত্মীয়ের বাসায় বা কোথাও এক রাতও গিয়ে থাকিনি। কিছু সময়ের জন্য মা’কে না দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে যেত। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, আমি যখন জেএসসি সমাপনী পরীক্ষা দিই, তখন শীত মৌসুম ছিল। পরিক্ষার দিন শীতের সকালে ‘মা’ আমাকে পুকুর পাড়ে রোদের কাছে নিয়ে নিজ হাতে গোসল করিয়ে দিতেন। নিজ হাতে গরম ভাত খাইয়ে দিতেন। পরীক্ষা হলে যাওয়ার আগ মুহুর্তে বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পাঠ করে আমাকে ফুঁ দিয়ে দিতেন। মায়ের দেওয়া সেই ফুঁ আর দোয়াতেই চলছে আমার জীবন।
কতশত স্মৃতি আর গল্প জমে আছে হৃদয়ের আঙ্গিনায়। এসব স্মৃতি আজন্ম বেঁচে থাকুক মনের মণিকোঠায়। দীর্ঘায়িত হোক আমার মায়ের জীবনের আয়ু রেখা। আমার জীবনের আয়ু রেখার কিছু অংশ যদি মাকে দিতে পারতাম!
প্রিয় মা, তোমার ছেলে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে! অনেক ভালোবাসি 'মা'। আমার চোখে তুমি পৃথিবীর সেরা 'মা'। আমার জন্য তোমার পরিশ্রম, ত্যাগ কত শত সংগ্রাম! যার বিনিময়ে আমি আজ এতদূর। তোমার স্বপ্ন, তোমার ছেলে ডাক্তার হবে। সেই পথেই হেঁটে চলেছি।
জানো মা,আমার লেখালেখির অনেকটা অংশ জুড়ে শুধুই তুমি। তোমার দেওয়া অনুপ্রেরণায় আমি আজ সামান্য লেখক। মানুষ যখন আমাকে লেখক বলে ডাকে, তখন তোমাকে ভীষণ মনে পড়ে। আমার সব অর্জন তোমার জন্যই।
পরিশেষে, একটা কথাই বলতে চাই- বৃদ্ধাশ্রম নামক শব্দটি আমাদের সমাজ থেকে মুছে যাক। তৈরি হোক ভালোবাসার বন্ধন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত অনেক মায়ের শেষ জীবনে আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে! অথচ আমরা ভুলেই যাই যে, একজন 'মা' প্রসবকালীন সময়ে পাহাড় সমান ব্যথা অনুভব করেন। প্রসব ব্যথার সঙ্গে আর কোনো ব্যথার তুলনা করা যায় না। অথচ এই গর্ভধারিণী মা'কে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে রেখে আসি, আফসোস!
এই 'মা' দিবসে একটাই প্রত্যাশা- পৃথিবীর সব মায়েরা বেঁচে থাকুক সম্মান আর ভালোবাসায়।
লেখক: শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর
/মেহেদী/