ঢাকা     বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩২

‘আম্মাকে একদিনও অলস সময় কাটাতে দেখিনি’

মুহম্মদ রাসেল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ১২ মে ২০২৪   আপডেট: ১৪:০২, ১২ মে ২০২৪
‘আম্মাকে একদিনও অলস সময় কাটাতে দেখিনি’

যে মানুষটি আমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, দশ মাস পেটে বহন করেছেন এবং অদ্যোবধি লালন করছেন সে মানুষটির নাম, মা। অবশ্য আমি তাকে সম্বোধন করি আম্মা বলে। আম্মাকে যথাযথভাবে বিশেষায়িত করার শব্দ আমার কাছে অপ্রতুল, আর তাকে নিয়ে পুরোপুরি লেখার জায়গাও ছোট্ট পৃথিবীটাতে কই?

আমার মা একজন সংগ্রামী নারী। তবে তিনি নিশ্চিত নন যে- তার পুরো নাম আনোয়ারা আক্তার নাকি আনোয়ারা বেগম। অথচ তিনি যোদ্ধা। তার জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে প্রগাঢ় সংগ্রাম, তার জীবনের বাঁকে বাঁকে গাঁথা সাহসী গল্পের কথকতা। তিনি চার সন্তানের জননী। যথাক্রমটি হলো- রিমা, ঝুমা, আমি ও আঁখি।

বড় আপুদ্বয় ছিলেন পিঠাপিঠি। তখন আব্বা চাকরির সুবাধে সম্ভবত সিলেট থাকতেন। বাসস্থান বলতে ছিল একটি নড়বড়ে কুঁড়েঘর। চালের ফুটোগুলোর নিচে বসানো অসংখ্য বাসনকোসন। কালবৈশাখী ঝড় প্রায়ই ঝাপটা মেরে ঘরটি মুচড়ে দিতে চায়। কোলে দুই ছোট্ট মেয়ে নিয়ে ঝড়ের রাতগুলো সন্তানদের নিয়ে যিনি অটল থাকতেন, তিনিই আমার মা আনোয়ারা আক্তার।

এ তো গেল প্রকৃতির ঝড়, জীবনের ঝড় তো আরও ভয়াবহ। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমি মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়েছি। আমাকে প্রতিদিনই তিনি গল্প বলে বলে ঘুম পাড়াতেন। শুধু গল্প নয়, মাটির গন্ধ মেশানো গ্রাম বাংলার চিরায়ত গানও। আম্মার ভরাট কণ্ঠে গান শুনতে শুনতেই রোজ নিদ্রামগ্ন হতাম। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ার কমতি না হলেও আম্মার সঙ্গে কেমন একটা ব্যবধান তৈরি হয়, একটা স্বাভাবিক বাধা তৈরি হয়। ফলে এখন আর তার বুকে শুয়ে বলতে পারি না- আম্মা তুমি গান না গাইলে ঘুমাবো না।

আমি কত অলস সময় যে যাপন করি! কিন্তু আম্মাকে একদিনও অলস সময় কাটাতে দেখিনি। সারাক্ষণ ঘরের কাজ, বাইরের কাজ করেই যাচ্ছেন। তার কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই, মূল্যায়ন নেই, বেতন নেই। তার কাজের কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই।

আমি নিজের ব্যাপারে অসম্ভব রকমের উদাসীন। জীবনের তাগিদে যখন ঢাকায় থাকছি- তখন আম্মার প্রতিটা মুহূর্ত কীভাবে কাটছে- সে আমিই জানি। বাড়িতে গেলে এখনো আম্মা দিনে কমপক্ষে তিনবার  গরম ভাত খেতে বাধ্য করেন। আর এতো কাজ করেও নিয়ম করে দু'বার শরবতসহ সারাক্ষণ এটা-সেটা ছাড়াও ঘুমানোর আগে খাওয়ার জন্য তৈরি করে রাখেন বাহারি কোনো বস্তু। ফলে বাড়িতে আসলে প্রতিবারই আমার শরীর নবরূপ পায়।

গ্রামে যে ‘বইবন্ধু’ পাঠাগারটা আছে- এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমার নাম বলা হলেও পুরো অবদান আম্মার। আমি বাড়িতে নেই, কিন্তু সেটা ঠিকই তিনি আগলে রেখেছেন।

আম্মাকে আমি দিয়েছি- এমন উল্লেখযোগ্য কিছু আছে বলে আমার স্মৃতিতে নেই। তবে যদি প্রশ্নটা হয়- ‘মাকে নিয়ে স্বপ্ন কী?’ তখন একটাই উত্তর – ‘এক পৃথিবী।’ জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছে আমি মা’কে অফুরন্ত অবসর দিবো। হাতের মুঠোয় এনে দিবো তার সমস্ত চাওয়া। 

লেখক: শিক্ষার্থী, এইচএসসি পরীক্ষার্থী, সোহরাওয়ার্দী কলেজ

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়