ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

জাবির আবাসিক হলের লিফটে ৩ ঘণ্টা আটকা শিক্ষার্থী 

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ৪ জুন ২০২৪   আপডেট: ২০:৩১, ৪ জুন ২০২৪
জাবির আবাসিক হলের লিফটে ৩ ঘণ্টা আটকা শিক্ষার্থী 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ১০ তলা বিশিষ্ট শহিদ তাজউদ্দিন আহমেদ হল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ও যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে নবনির্মিত হলটির লিফটে এক শিক্ষার্থীর টানা ৩ ঘণ্টা আটকে থাকার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হল প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী।

গতকাল সোমবার (৩ জুন) দুপুর দেড়টায় হঠাৎ লোডশেডিংয়ের কারণে হলের লিফটে এ ঘটনা ঘটে বলা জানা গেছে। পরে বিদ্যুৎ আসলেও লিফট চালু না হওয়ায় আরও দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে ছিলেন ওই শিক্ষার্থী। পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় হলের এক কর্মচারি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে লিফট খুলে তাকে উদ্ধার করেন।

ভুক্তভোগী নয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সোমবার দুপুর দেড়টায় বেজমেন্ট থেকে সপ্তম ফ্লোরে লিফটে উঠার পথে বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন আমার কাছে ফোন না থাকায় কাউকে ফোন দিতে পারিনি। তাই আমি লিফটের ভেতরে থাকা ইন্টারকমে প্রেস করি। ইন্টারকম প্রায় ৫-৭ মিনিট বাজলেও হল অফিস থেকে কেউ লিফট খুলতে আসেনি। 

তিনি আরও বলেন, কোনো এক শিক্ষার্থী হয়তো ইন্টারকম বাজতে দেখে রিসিভ করতে গিয়েছিল। কিন্তু রিসিভ করতে না পেরে সে হয়তো ইন্টারকমটা ভুল জায়গায় রেখে চলে যায়। পরে আমি ইন্টারকমে কল করলেও সেটা আর বাজেনি। প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বিদ্যুৎ আসে। কিন্তু লিফট আবার হ্যাং হয়ে যাওয়ায় লিফট আর খোলেনি। পরে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর সাড়ে ৪টার সময় হল অফিস থেকে কেউ একজন এসে লিফট খুলে দিয়েছে।

ভুক্তভোগী বলেন, বের হয়ে আমি কর্মকচারিকে জিজ্ঞাসা করলাম, তারা হল অফিসে থাকেন কিনা? উত্তরে তিনি আমাকে বললেন, ‘এখন সবার ছুটি চলছে। তাই হল অফিসে কেউ নেই।’ আমার প্রশ্ন হচ্ছে হল অফিসের কি সবাইকে একসাথে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়?

ভুক্তভোগী নয়ন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হল কর্তৃপক্ষের কর্মতৎপরতা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই আজ হলে এ অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। হলের যেসব কর্মচারি আছে তারাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। দিনে ৪-৫ বার লোডশেডিং হয়, প্রতিবার কারেন্ট গেলেই এক ঘণ্টা পর আসে। এই এক ঘণ্টা যারা উপরতলায় থাকে তাদের বিদ্যুৎ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। শতকোটি টাকা দিয়ে পরিকল্পনাবিহীন মূর্তির মতো হল বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে চলাফেরা করবে তার ব্যবস্থা করা হয়নি। আমি হল অফিসে দুবার গিয়েছিলাম। কিন্তু কারোরই দেখা পাইনি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চাই।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শহীদ তাজউদ্দন আহমেদ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, আমাদের হলে মাত্র একজন লিফটম্যান আছে, ঈদের পরপরই আমরা আর একজন লিফটম্যান পাব। ঈদের পর জেনারেটর চালু করার ব্যবস্থা করব। তখন আশা করি এসব সমস্যার সমাধান হবে।

হলের অন্যন্য সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান সংকটের জায়গা হচ্ছে কর্মচারি। যেখানে অন্যন্য হলে ৫০ জনের অধিক কর্মচারী রয়েছে, সেখানে এই হলে মাত্র ২৯ জন। হলে নেই কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী। প্রশাসনকে বারবার বলার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। হলের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ডাইনিং। গ্যাস সংযোগ ছাড়া কোনোভাবেই ডাইনিং চালু করা সম্ভব না। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এসব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ, তাই ওই শিক্ষার্থীর উচিৎ ছিল হল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে হলে অবস্থান করা এবং লিফট ব্যবহার করা। তাহলে হয়তো কর্মচারীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে উদ্ধার করতে পারতো। যে ঘটনাটি ঘটেছে, এটা কোনোভাবেই কাম্য না। তবে লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে। তবুও আমরা লিফটম্যান, লিফট সাপ্লায়ারকে জিজ্ঞেস করবো- এ ঘটনা কেনো ঘটলো, কোথায় ঘাটতি ছিল? 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, প্রত্যেকটা লিফটে অটোমেটিক সিস্টেম আছে। ব্যবহারকারী শিক্ষার্থী বা আটকা পড়া ব্যাক্তি এটাতে আঘাত করলে লিফট আটকে যেতে পারে। এ সমস্ত কিছুর রেকর্ড লিফটে থেকে যায়। এসব বিশ্লেষণ করে লিফট আটকে যাওয়ার আসল কারণটি আমাদের বের করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পাওয়ার ব্যাকআপ হিসেবে প্রত্যেকটা হলে আমরা জেনারেটর দিয়েছি। কিন্তু ব্যবহার না করে কেন ৩০ লাখ টাকা মূল্যের জেনারেটর ফেলে রাখা হয়েছে, সেটা হল ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তারা বলতে পারবেন।

/আহসান/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়