ঢাকা     শনিবার   ২৯ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

জাবিতে ভবনের নির্মাণে ছাত্রলীগের বাধা, চাঁদা দাবির অভিযোগ

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৪ জুন ২০২৪  
জাবিতে ভবনের নির্মাণে ছাত্রলীগের বাধা, চাঁদা দাবির অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিক্ষকদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।

সোমবার (৩ জুন) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ভবনের কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীকে মারধর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী উপস্থিত হন। এসময় তারা কার নির্দেশে ভবনের কাজ শুরু করেছে জানতে চেয়ে কর্মচারীদের এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখানে কাজ করো, বড় ভাইদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা লাগে না? ভাইদের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে।’ একপর্যায়ে শ্রমিকরা ভয় পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এছাড়া গেস্ট হাউস ও সুইপারদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনের কাজও বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয় ও অর্থ সম্পাদক তৌহিদুল আলম তাকিদ। তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শ্রমিক জানান, বিকালে এখানে ৭-৮টি মোটরসাইকেল নিয়ে একদল ছাত্র এখানে আসে। তখন আমার কাছে ম্যানেজার সম্পর্কে জানতে চায়। ম্যানেজারকে দেখিয়ে দিলে তারা তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং দফায় দফায় চারজনকে মারধর করে। আমরা জিজ্ঞেস করতে গেলে তারা বলেন, ‘তোদের এমডিকে কল দে! সে কি হয়ে গেছে যে, আমাদের এখানে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে হবে? সে আমাদের কোনো খোঁজখবর রাখে না। সে জানেনা যে, জাহাঙ্গীরনগরে আসলে আমাদের সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে হয়। এমডিকে বলিস যে ভাইয়েরা আসছে। আমাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখে। আমাদের পরিচয় জানার দরকার নাই।’

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, আমি কাজ বন্ধ করার খবর পেয়েছি। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ভাইকে বিষয়টা জানিয়েছি। কেনো আমার কাজ বন্ধ করা হলো জানতে চেয়েছি? তিনি বলেছেন, ‘কারা কাজ বন্ধ করেছেন এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিবেন।’

চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে তো আর কাজ করতে আসেনি। কেনো এসেছে, তা আপনার বুঝতে পারেন। তবে কাল থেকে কাজ চলবে আশা করছি। কাজ বন্ধ রাখার কোন কারণ দেখছি না।

নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নাহিদ বলেন, আমার বিষয়ে যে অভিযোগ করল, সে কি আমাকে চেনে? কীভাবে সে আমাকে চিহ্নিত করল? আর আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।

অভিযুক্ত মেহেদী হাসান জয়ের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে অভিযুক্ত তৌহিদুল আলম তাকিদ বলেন, আমি বিকাল ৩টার দিকে বিশমাইল গিয়েছিলাম বাইকের তেল আনতে। পরে সাড়ে ৪টার দিকে সেন্ট্রাল ফিল্ডে ছিলাম কিছুক্ষণ। এরপর হলে চলে আসি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে এ বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমডি বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন বলে জানালে সোহেল বলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি। তবে কারা কাজ বন্ধ করেছে, তা জানতে পারিনি। আর যাদের নাম বলেছেন, তারা যায়নি। কোনো ছাত্রলীগ কর্মী এমন কাজ কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি দল আমাদের চলমান কাজের তিনটি এলাকায় গিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের গালিগালাজ ও মারধর করেছে। তারা বলেছে, প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। এভাবে হুটহাট করে এসে কর্মচারীদের মারধর করা ন্যাক্কারজনক।

/আহসান/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়