ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দিয়ে আমরণ অনশনে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী

বশেমুরবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২১, ৫ জুন ২০২৪   আপডেট: ২১:২২, ৫ জুন ২০২৪
রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দিয়ে আমরণ অনশনে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী

‘বিচারে কেন এত বিলম্ব?’, ‘অভিযুক্তকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে’- এমন দাবি নিয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থী সঞ্জয় দাশ। তিনি কৃষি বিভাগ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

বুধবার (৫জুন) বিকেল ৫টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন তিনি। অনশনের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দেন তিনি আগামীকালকের মধ্যে অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লাকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি করেন। দাবি না মানা হলে প্রতিটি দপ্তরে ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন সঞ্জয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিনশেড এলাকায় অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লার সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিদ্যুৎ ছিল না। পরদিন সঞ্জয়ের পরীক্ষা ছিল। তীব্র গরমে গ্রন্থাগার থেকে বেরিয়ে এসে টিনশেডে গিয়ে পড়তে বসেন সঞ্জয়। পাশেই বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাসুদ মোল্লা। তাদের কারণে পড়াশোনা বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় সঞ্জয় অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লাকে ধীরে ধীরে কথা বলার অনুরোধ জানান। এতে রেগে গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন অভিযুক্ত। এতে তার ডান চোঁখের উপরের অংশ ফেটে যায়। 

ভুক্তভোগী সঞ্জয়ের পাশে ছিলেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল হাসান আকাশ। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক আকাশ বলেন, সেদিন সঞ্জয় তাদের ধীরে ধীরে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু মাসুদ মোল্লা সঞ্জয়ের কথায় উত্তেজিত হয়ে তাকে আঘাত করতে থাকে। এখানে তার কোনো দোষ ছিল না।

তিনি বলেন, এ অবস্থা দেখে তাকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাই। কিন্তু রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে দ্রুত গোপালগঞ্জ ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার তার কপালে পাঁচটি সেলাই দিয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লাকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সেদিন সঞ্জয় তার সঙ্গে বেয়াদবি করে। তাই রাগের মাথায় তিনি চড়াও হন। দুজনের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সঞ্জয়ের চোখের উপরে আঘাত লেগে যায়।

দায় এড়িয়ে মাসুদ বলেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে সঞ্জয়কে আঘাত করিনি। এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল। একই ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটতে পারতো।

ঘটনার দিন বিকেলে ভুক্তভোগী গোপালগঞ্জ সদর থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন। একই দিন সন্ধ্যায় বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র দেন তিনি। সেখানে সঞ্জয় দাবি করেন, মাসুদ তাকে ইট দিয়ে আঘাত করেছে। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে কি হয়েছে তা তার জানা নেই।

ঘটনার দুদিন পর রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় এবং অ্যাকাডেমিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু গত ২ জুন থেকে মাসুদের মাস্টার্সের মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু হলে তিনি যথারীতি অংশগ্রহণ করেন।

এ ঘটনায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. আনিসুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

বহিষ্কৃত কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি তো জানি তাকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। কিন্তু সে কিভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে?

প্রক্টর সূত্রে জানা যায়, মাসুদের বহিষ্কারের নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান। এজন্য বিভাগীয় পরীক্ষায় মাসুদ উপস্থিত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে মারামারির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ ২২ দিন পরও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সেলের প্রধান সাজিদুল হক বলেন, গত কয়েকদিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেছে। প্রতিটি বিষয় খুবই জটিল। একসঙ্গে এতগুলো বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আমাদেরকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগামীকালে মধ্যে আমরা রিপোর্ট জমা দিব।

/হৃদয়/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়