ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

কেনো ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়বেন?

আলিফ সাঈদ ফাতিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ২২ জুন ২০২৪  
কেনো ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়বেন?

সম্প্রতি পর্যটন বিশ্বজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রমবর্ধমান শিল্প হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। পর্যটন একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও একটি বড় প্রভাব রাখে। যা মাথাপিছু আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায়। এটি এসডিজির বেশিরভাগ লক্ষ্য পূরণ করে।

পৃথিবীর অনেক দেশের জিডিপি তাদের পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভর করে। যেহেতু বিশ্বজুড়ে পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, পর্যটন শিল্পকে সারা বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রটির দিকে নজর দিচ্ছে। পর্যটন এবং এর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো পেশা হিসেবে পৃথিবীব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ এ বিশেষ ক্ষেত্রে পেশাদার মানবসম্পদ তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে। 

দেশে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগটি চালুর মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষা-কার্যক্রম। বর্তমানে দেশের সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পাঠদান চলছে। সেগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক কলেজে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয় পড়ানো হচ্ছে। এমনকি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কিছু প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করছে। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে সরকারি ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউশনেও।

এসব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনেরও সুযোগ রয়েছে।

বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়ামসহ এশিয়ার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির সুযোগ রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিক্ষার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, বাদ যায়নি বাংলাদেশও। যদি কারও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে আগ্রহ থাকে, তাহলে তিনি এ বিভাগটির অধীনে ভর্তি হতে পারেন। পর্যটন ও আতিথেয়তা সম্পর্কিত বেশিরভাগ লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণ ব্যবহারিক নির্ভর। তাই এ পেশায় আপনি যদি অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকতে চান, তাহলে আপনার বাস্তব জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ থাকতেই হবে।

এ বিভাগটির অধীনে ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট, হাউসকিপিং ম্যানেজমেন্ট, কালিনারি আর্টস, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট, লেজার অ্যান্ড রিক্রিয়েশন সার্ভিস, ফাইন্যান্স, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি মার্কেটিং, ট্যুরিজম ইন বাংলাদেশ, এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট, রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট, গবেষণা পদ্ধতি, গ্লোবাল ইস্যুস ইন ট্যুরিজম, ফান্ডামেন্টালস অফ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য বিষয় পড়ানো হয়।

একজন পর্যটক যখনই ভ্রমণে বের হবেন, তখন তার আবাসস্থলের জন্য যোগাযোগ করবেন একটি হোটেল, মোটেল বা রিসোর্টের ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসারের সঙ্গে। তখন ওই পর্যটকের চাহিদা বুঝে কীভাবে তাকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা যায়, তা শেখানো হয় ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্টে। এরপর পর্যটকের আবাসন সুবিধা এবং অবস্থানকালীন সেবা সম্পর্কে জানা যায় হাউসকিপিং ম্যানেজমেন্টে। অতিথির পছন্দ, স্বাদ, গুণগত মান মাথায় রেখে কীভাবে খাবার তৈরি এবং পরিবেশন করতে হয়, সে বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় কালিনারি আর্টস এবং ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কোর্সে। এখানে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কিভাবে রান্না এবং পরিবেশন করতে হয় তা সম্পর্কে জানতে হয়।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি হোটেলের রান্নাঘরের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে শিখতে হয়। এই কোর্সের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী চাইলেই একজন নামকরা রন্ধনশিল্পী হয়ে উঠতে পারেন। একজন দক্ষ রন্ধনশিল্পীর বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৩২০ মিনিয়ন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশে ১.৭ মিনিয়ন জনশক্তি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ক্যারিয়ারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অনেক চেইন-স্টার হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। দিন দিন দক্ষ শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের চাহিদা বাড়ছে। শুধু ঢাকাতেই প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ওয়েস্টিন ঢাকা, শেরাটন, রেনেসাঁ, লা মেরিডিয়ান, রেডিসন ব্লু, হানসা রেসিডেন্স, ঢাকা রিজেন্সিসহ অনেক তারকা মানের হোটেল তৈরি হয়েছে।

এছাড়া দ্য প্যালেস, রয়্যাল টিউলিপ, গ্র্যান্ড সুলতান, অরুনিমা রিসোর্ট, ডু-সাইসহ দেশের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ এলাকায় অনেক নামি-দামি ব্রান্ডের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। সেবা-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে (ব্যাংক, বীমা, টেলিযোগাযোগ, পাবলিক সার্ভিস এবং অন্যান্য) ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি  দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোতে কেবিন ক্রু এবং স্টুয়ার্ড পদে যোগদানেরও সুযোগ রয়েছে।

দেশের বর্তমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখলেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ বিশ্ব পর্যটনের নতুন গন্তব্যে পরিণত হতে যাচ্ছে। তাই সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ভবিষ্যতে এ সেক্টরে প্রচুর দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। ফলে এ সেক্টরে পড়ার আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

তবে এ বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীদের শুধু পর্যটন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে হবে, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজের সুযোগ রয়েছে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ পারিশ্রমিকে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগতো থাকছেই।

লেখক: শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়