ঢাকা     রোববার   ৩০ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের আল্টিমেটাম

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২৫ জুন ২০২৪   আপডেট: ২২:৪৭, ২৫ জুন ২০২৪
পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের আল্টিমেটাম

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষণা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মঙ্গলবার (২৫ জুন) অর্ধদিবস কর্মবিরতি, অবস্থানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে জারিকৃত পেনশন স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। এসময় তারা আগামি ৩০ জুনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন শিক্ষক নেতারা।

কর্মসূচিতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত  প্রজ্ঞাপন একটি ষড়যন্ত্রমূলক ও দূরঅভিসন্ধিমূলক প্রজ্ঞাপন। এটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপের শামিল। আমরা শিক্ষকেরা সর্বোচ্চ পরিশ্রম করি। যেটার পরিবর্তে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা আমরা পাই না। তারপরেও বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু গত মার্চ মাসে ঘোষিত সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অবনমন করা হয়েছে, যা আমাদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অবিলম্বে এ বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা ঢাবির শিক্ষক সমাজ কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলনে যাবে।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। আমাদের সঙ্গে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। আগামি জুলাই মাসের মধ্যে প্রত্যয় স্কিম বাতিল না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনিদিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাবেন। এসময় হল প্রাধ্যক্ষ হলে যাবেন না, বিভাগে শিক্ষকেরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ কর্মবিরতিতে থাকবে। এছাড়া দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

এর আগে, প্রত্যয় স্কিমের প্রতিবাদে সোমবার (২৪ জুন) শিক্ষক সমিতি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৫,২৬ ও ২৭ জুনের কর্মসূচির ব্যাপারে জানানো হয়। তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। আগামি ৩০ জুন তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি করবেন বলে জানা গেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে কর্মবিরতি -অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকরা। 

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এছাড়া দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও এ সময়ে শিক্ষকরা কোনো ধরনের ক্লাস নেয়নি। তবে পরীক্ষাসমূহ এই কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল।

এ বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, প্রত্যয় স্কিম একটি বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককের মধ্যেই বৈষম্য তৈরি হবে। আগামী ১ জুলাইয়ের পর যারা শিক্ষকতার কিংবা অন্য সরকারি চাকরিতে ঢুকবেন, তাদের জন্য আলাদা নিয়ম আর বাকিদের জন্য আলাদা নিয়ম। আমাদের পরবর্তী জেনারেশন এ বৈষম্যের শিকার হবে। আমরা এই বৈষম্য চাই না। সেজন্য বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আন্দোলন কর্মসূচি চলবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের তিনটি দাবিতে আন্দোলন চলছে। প্রত্যয় স্কিম বাতিল, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা। এই তিন দাবি না মেনে নেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। ইতোমধ্যে এক জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের পাঠদান থেকে বিরত ছিলেন শিক্ষকেরা। এছাড়া বেলা ১১টার দিকে বাকৃবির প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন আমতলায় অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন তারা।

বাকৃবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাকৃবিতে ২৫ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত অর্ধদিবস ও ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে। এ সময় ফাইনাল পরীক্ষা ব্যাতিত সব ধরনের ক্লাস ও ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।

অবস্থান কর্মসূচিতে বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তানভীর রহমানসহ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা অংশ নেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত কর্মবিরতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আগামী ১ জুলাই থেকে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। মঙ্গলবার (২৫ জুন) অনলাইনে আয়োজিত সমিতির এক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বশির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন থেকে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, আমরা তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছি। আজ বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের। আগামী ১ জুলাই থেকে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক এবং দাপ্তরিক কাজে আমরা অংশগ্রহণ করবো না।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)
শিক্ষক সমিতি কর্তৃক আয়োজিত পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার দাবিতে এমন হুশিয়ারি দিয়েছেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.সাদেকুর রহমান। 

দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

এতে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান, হাবিপ্রবি প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায় প্রমুখ।

এ সময় হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান বলেন, দাবি আদায় না হলে অনির্দিষ্ট কালের কর্মবিরতিতে যাওয়া হবে এবং গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হবে। আমরা চাই, আমাদের দাবি অতি দ্রুত মেনে নেওয়া হোক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়