ঢাকা     রোববার   ৩০ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

প্রত্যয় স্কিম: শিক্ষকদের আন্দোলনে দোটানায় ইবি শিক্ষার্থীরা

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২৭ জুন ২০২৪  
প্রত্যয় স্কিম: শিক্ষকদের আন্দোলনে দোটানায় ইবি শিক্ষার্থীরা

অর্থ মন্ত্রণালয় জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলনে রয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা। গত বছরের ১৭ আগস্ট চালু হয় সর্বজনীন পেনশন। তখন এতে চারটি স্কিম (প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা) রাখা হয়। এই ঘোষণার সাত মাস পর যুক্ত করা হয় নতুন স্কিম ‘প্রত্যয়’। এতেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। 

এরই অংশ হিসেবে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারসহ পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখা, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন কার্যকর করার দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে আসছে সংগঠনটি। এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মবিরতি পালন করছেন অন্যান্যদের মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরাও। 

এসব কর্মসূচির বেড়াজালে আটকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম। এ লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে পড়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে সেশনজট হতে পারে। এমনকি করোনার প্রাদুর্ভাবে যেভাবে পিছিয়ে পড়েছিল কার্যক্রম, ঠিক তেমনটাই ঘটতে যাচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যায় ধুকলেও এসব বিষয়ে কখনো সরব হন না শিক্ষকরা। তবে সরকারের একটা সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের স্বার্থে সরাসরি আঘাত হানতেই কর্মবিরতির মতো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন তারা। তাদের দাবি, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে আবার শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে যেন ফিরে আসেন।

আগামী ১ জুলাই ইবির বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে একাধিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা ঈদের ছুটি কাটিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসা নিয়েও দোটানায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। বিভাগ থেকেও পরীক্ষা হবে কি-না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হচ্ছে না। এদিকে আবার শিক্ষক সমিতির ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির জন্য পরীক্ষা হওয়া নিয়েও সংশয় তাদের মনে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আগামী ১ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সব কার্যক্রম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার কথা আছে। তবে সরকারের সঙ্গে যেকোনো সময় সমঝোতা হয়ে গেলে আমাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে যদি সরকার আলোচনায় না বসে সে ক্ষেত্রে আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, দাবি মানা না হলে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি ফেডারেশনের প্রজ্ঞাপনেই বলা আছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আগামী ১ তারিখ থেকে চলমান পরীক্ষা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ১ তারিখ থেকে চলমান সব পরীক্ষাও স্থগিত থাকার কথাও বলা আছে। বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে যারা আন্দোলনে আছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। বিভাগের শিক্ষকরা বিভাগের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে আমি চাইবো, দ্রুত এর একটা সমাধান যেন হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের আন্দোলন বা কর্মসূচি চলমান থাকলে অবশ্যই সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হতে পারে। তবে শিক্ষকরা চাইলে আবার সেই ক্ষতিটুকু পুষিয়ে নিতে পারবেন। আমার শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান থাকবে, যখন বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে, তারা যেন এ বিষয়ে নজর দিয়ে শিক্ষার্থীদের এ গিয়ে নিতে সহায়তা করেন।

/নুর/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়