ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১ জুলাই ২০২৪  
জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি মো. ইব্রাহীম ফরাজিকে সভাপতি ও এসএম আকতার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির নেতারা জন্ম দিচ্ছে নানা বিতর্কের। আড়াই বছর ধরে চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা অভিযোগের পর এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন তার নিজ ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এমসিকিউ এর উত্তর অন্যজনকে প্রদান করেন। উত্তরপত্রের অধিকাংশই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলে যায়। 

মেসেঞ্জার বার্তায় দেখা যায়, যিনি উত্তর নিচ্ছেন তিনি আকতারের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুরোধ জানান। জবাবে আকতার সব দিয়েছেন বলে ফিরতি বার্তায় জানান। সেই সঙ্গে এটি কাউকে না জানানোর অনুরোধ করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে করা আকতারের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের  কথা তুলে ধরেন। 

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্য, জালিয়াতি, টেন্ডার বাণিজ্য- এসব তো ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য না। যারা এসব করবে, তারা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হোক। তারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এসব অপরাধ করে সংগঠনের সুনাম নষ্ট করছে। 

জবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহ-সভাপতি মিঠুন বাড়ৈ বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক আকতার দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহ-সভাপতি হাবুল হোসেন পরাগ বলেন, ‘একের পর এক বিতর্কিত কাজ করে সংগঠনকে কলুষিত করেই যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জবি ছাত্রলীগকে ইব্রাহিম ও আকতারের কাছে ইজারা দেওয়া হয়নি। ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। সংগঠনের মান ক্ষুণ্ণ করে যখন কেউ প্রশ্নফাঁসের মত গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

এদিকে ফেসবুক মেসেঞ্জারের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে একটি অডিও ক্লিপও। আকতারের মামাতো ভাই পরিচয়ে মাদারীপুরের কাকন মিয়া ভর্তি পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দেয় এক ব্যক্তিকে।

ওই অডিও ক্লিপে শোনা যায়, কাকন মিয়া নিজেকে আকতারের আপন মামাতো ভাই পরিচয়ে অপর পাশের ব্যক্তিকে পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছেন। এছাড়া কল রেকর্ড যাতে লিক না হয় সেসব ব্যাপারেও সতর্ক করছেন।

এ বিষয়ে জানতে কাকন মিয়াকে কল দেওয়া হয়। যিনি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন কাকন মিয়া। এরপর আর কোনো কথা না বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। 

তবে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার দাবি করেন আকতার হোসাইন। তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার আপন ছোটভাইকে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ছিল। সে প্রাইভেটে পড়ছে কেন? আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে কথাগুলো বলছেন, এর কোনো প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?’

অপরাধে জড়িত থাকলে আকতারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।  তিনি বলেন, ‘অভিযোগ টা এসেছে। যাচাই-বাছাই চলছে। অনুসন্ধান করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘অনৈতিক, গঠনতন্ত্র বিরোধী ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী ও দলীয় আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ড কেউ পরিচালনা করলে, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

/লিমন/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়