ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ১ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২২:০২, ১ জুলাই ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি

তিন দফা দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকেই শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচিও পালন করতে দেখা গেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাইজিংবিডির সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাবি শিক্ষক সমিতি সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এদিন সকাল থেকেই সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেন শিক্ষকরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। ঢাবির কলা ভবনের সম্মুখ গেটে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। 

অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্যই আমাদের এই আন্দোলন। এ আন্দোলন ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে, যতক্ষণ না ঐ বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না করা হবে। একইসঙ্গে ২০১৫ সালে আমাদের যে সুপার গ্রেড দেওয়ার কথা ছিল সেটা চালু করতে হবে। আমাদের জন্য স্বতন্ত্র পে স্কেল চালু করতে হবে। বিভিন্ন আইন দিয়ে আমাদেরকে এসব দেওয়া হচ্ছে না এবং আমাদের দাবিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই সর্বাত্মক আন্দোলন শুধু আমাদের জন্য নয়, এটা শিক্ষার্থীদের জন্য, আগামী প্রজন্মের জন্য, শিক্ষাব্যবস্থার জন্য। তাহলে কারা বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালান যে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি হবে? করোনার সময় দুই বছর পিছিয়ে গিয়েছিলো, সেসব আমরা পুষিয়ে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য সব আমরা করেছি। 

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি। সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এতে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। আমাদের সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
তিন দফা দাবিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করা জন্য বলে জানিয়েছেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসাম। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে আমরা শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছি, সেটা শুধু আমাদের আন্দোলন নয়। এটা আমাদের শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আন্দোলন। আমরা যারা ১ জুলাইয়ের আগে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগদান করেছি, তারা এ স্কিমের কারণে ভুক্তভোগী হব না। কিন্তু ১ জুলাইয়ের পর যেসব শিক্ষার্থী এ পেশায় আসবেন, তারা এ বৈষম্যের শিকার হবেন। আমরা আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এ আন্দোলনে নেমেছি। যাতে আমাদের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আকাশ-পাতাল বৈষম্য তৈরি না হয়।

এদিকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে শিক্ষক, কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে আসলেও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী দাপ্তরিক কাজও করেননি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
একই দাবিতে ইবি শিক্ষক সমিতি সাতটি ভিন্ন কর্মসূচি চালু রেখে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে। কর্মবিরতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনে দুপুর ১২টা থেকে শতাধিক শিক্ষক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এবং সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত হোসেন আজাদ, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল।

এছাড়া ইবির অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অধ্যাপক ড. সাহিদা আখতার, অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম, অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মো. জাফর আলী, প্রভাষক তন্ময় সাহা জয় উজ্জ্বল হোসেন প্রমুখ।

এসময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, আমরা শুরুতেই সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যায়নি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চেয়েছিলাম, যেন আগেই এর সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু কোনো সুরাহা না পেয়ে আজ এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছি। সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো আমরাও স্বতস্ফুর্তভাবে পালন করছি।

শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা পরবর্তীতে অতিরিক্ত সময় দিয়ে হলেও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিব, ইনশাআল্লাহ। তবে আমরা আশাকরি সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত সমাধান করবে এবং শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি করবে না।

তাদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল- বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস বন্ধ থাকবে; অভ্যন্তরিন মূল্যায়ন, ভর্তি-পরীক্ষা, ব্যবহারিকসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ থাকবে; ডিন, প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, পরিচালকের অফিসসহ সেমিনার লাইব্রেরি ও ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে; অ্যাকাডেমিক ও প্লানিং কমিটি, পরীক্ষা কমিটি, সিলেকশন বোর্ডসহ শিক্ষক-সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সভা বন্ধ থাকবে; শিক্ষকরা কোনো সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ আয়োজন বা অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
এদিন দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সর্বাত্মক কর্মবিরতির পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কুবি শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, সামাজিক সম্মান ব্যতীত আর তেমন কোনো কিছুই অর্জন করার সুযোগ নেই শিক্ষকতা পেশা থেকে। কিন্তু এই পেনশন স্কিম আমাদের বিদ্যমান যে সুযোগ-সুবিধা, সেগুলোকেও সংকুচিত করেছে। যদি এমন হয় তাহলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবে না, যা শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। আমরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের সাথে একমত। আমরা চাই এটা বাতিল করা হোক।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)
বেরোবিতে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে নিয়মিত শিক্ষা-কার্যক্রমে। অ্যাকাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ি এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।

সকালে অ্যাকাডেমিক ভবনগুলো খুললেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষার কক্ষগুলো তালাবদ্ধ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসলেও তারা অলস সময় পার করছেন।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকী বলেন, গত ১৩ মার্চ জারিকৃত ‘প্রত্যয় স্কিম’ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবি পূরণ হয়নি। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বেরোবিতে সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা, সমন্বয় সভা, ভর্তি কার্যক্রম ও প্রাধ্যক্ষ অফিস বন্ধ থাকবে। যতক্ষণ আমাদের তিন দফা দাবি মেনে না নিবে, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে আমরা শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করব।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)
একই দাবিতে হাবিপ্রবিতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনে ব্যানারে ড. এমএ ওয়াজেদ ভবনের নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেন।

সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান, গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড . ফাহিমা খানম, হাবিপ্রবি প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায় প্রমুখ।

হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমরা একদিনে এমন কঠোর কর্মসূচিতে আসিনি। শুরুতে ১ ঘণ্টা, অর্ধদিবস কর্মবিরতি এমন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আমরা কোনোভাবেই আন্দোলনে থাকতে চাই না।এতে আমাদের শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু তবুও কোনো উপায় না পেয়ে আমাদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। দাবি মেনে নিলেই আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব।

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে কোন বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে খোলা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং স্বাভাবিক ছিল বাস চলাচল।

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (শেহাবি)
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির এ কর্মসূচির পালন করেছে শেহাবি শিক্ষক সমিতিও। বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তারা পাঠদানসহ যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রাখেন। কর্মবিরতি চলাকালে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শেহাবি শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মবিরতি চলাকালে এভাবে প্রতিদিন তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানা গেছে।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শেহাবি শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক হাফসা আক্তার, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আব্দুল হালিম, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আঙ্গুর হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান শোভন রায় প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে অ্যাকাডেমিয়াকে পিছিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এ খাতে তরুণদেরকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং শিক্ষকমণ্ডলীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতায় নিমজ্জিত করা হচ্ছে। প্রত্যয় স্কিম বাতিলের কর্মসূচি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাঁচানোর কর্মসূচি, অ্যাকাডেমিকে বাঁচানোর কর্মসূচি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
জাবি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে সকাল ৯টা থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা। এর আগে, রোববার একই দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। 

এ বিষয়ে জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাব এবং ক্লাসে ফিরবো না। আমরা গত তিনমাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। প্রথমে মানববন্ধন করেছি, ১ ঘণ্টা-২ ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়েছি। পরে অর্ধদিবস, পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি। তখন ক্লাস-পরীক্ষা চলমান ছিল। কিন্তু আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি। কারণ আমাদের যেটুকু-সুবিধা ছিল, সেটুকু বাতিল হলে এ পেশায় আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসবে না।

এদিকে সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন সকাল থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের নিচে একটি প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে জাবি অফিসার সমিতি।

অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, একই দেশে দুই ধরনের পেনশননীতি চলতে পারে না। আমরা এই পেনশন প্রথা বাতিল করে পূর্বের প্রথা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আগামীকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতি এবং কর্মচারী সমিতি মিলে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করবো।

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সোমবার (১ জুলাই) থেকে সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন থেকে কর্মবিরতি নিয়েছেন। কর্মবিরতির প্রথম দিন সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এ সময় জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ ফাগুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড ব্লু ইকোনমি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. অরুণ চন্দ্র বর্মন, ফিসারিজ বায়োলজি অ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক চয়নিকা পন্ডিত, জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত হোসেন নুসি, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এমেলি আক্তার, জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের প্রভাষক মোহতাসিম বিল্লাহ সাজিদ।

শিক্ষকরা বলছেন, তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে গত ২০ মে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তার ধারাবাহিকতায় ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর ২৮ মে ২ ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিনদিন সারা দেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরে রোববার (৩০ জুন) পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়