ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২১ ১৪৩১

দ্বিতীয় দিনেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি পালন

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২৩:০৫, ২ জুলাই ২০২৪
দ্বিতীয় দিনেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি পালন

জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে মঙ্গলবার (২ জুলাই) দ্বিতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। রাইজিংবিডির প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি)

বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে অবস্থান কর্মসূচি বেরোবি শিক্ষকরা। এতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। এতে সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২ জুলাই) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সকাল থেকেই সর্বাত্মক পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেন তারা।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডলের নেতৃত্বে শিক্ষকেরা দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে কর্মকর্তারা সকাল থেকেই কর্মবিরতি পালন করছেন। এসময় অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মচারীদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝোলানো। যে সকল বিভাগ খোলা হয়েছে-সেগুলোর ক্লাসরুমগুলো তালাবদ্ধ। ক্যাম্পাসে নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। 

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, বৈষম্যমূলক এই পেনশন স্কীম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যে আন্দোলন করছি, সেটা শুধু আমাদের আন্দোলন নয়, এটা আমাদের শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আন্দোলন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে দেশব্যাপী দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান  কর্মসূচি চলছে। একই ভাবে দিনাজপুরের  হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান  কর্মসূচী পালন করেছেন। যার ফলে সকল ক্লাস,পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে  হাবিপ্রবিতে । 

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের নিচে ঘন্টা ব্যাপি  অবস্থান কর্মসূচি পালন করে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। এবং বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন এর ব্যানারে ড. এম ওয়াজেদ ভবনের নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

এতে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান, গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড . ফাহিমা খানম , হাবিপ্রবি প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায়সহ বিভিন্ন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ ।

হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমাদের এই আন্দোলন হঠাৎ করেই এই অবস্থায় আসেনি৷ আমরা পর্যায়ক্রমে ঘন্টা ব্যাপি, অর্ধদিবস কর্মসূচি পালন  করে আজকের এই অবস্থায় আসতে বাধ্য হয়েছি। আমরা তরুণ প্রজন্মের জন্য এ লড়াই করছি। আর এই আন্দোলন আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। দাবি আদায় না হওয়া  পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। আমাদের ফেডারেশন যে সিধান্ত নিবে আমরা তাতে অটল থাকবো।

হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক   ড. সাদেকুর  রহমান বলেন, ১৩ মার্চ অর্থমন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে  এই প্রত্যয় স্কিমের কথা বলা হয়। কিন্তু তারা কি আমাদের সাথে কথা বলেছে?আমরা কি এমন কিছু কখনো চেয়েছি।সরকারের কিছু কূটকৌশলী আমলারা সরকারের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উপর   এমন স্বেচ্ছাচারী প্রত্যয় স্কিম চাপানোর অপচেষ্টা করছে।এমন প্রত্যয় স্কিম প্রতিষ্ঠিত হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় আসবে না। আমরা শিক্ষক সমাজ  কখনোই জাতির এমন সর্বনাশ হতে দিবোনা।আমরা আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুনিশ্চিত ভবিষ্যত সৃষ্টি করেই যাবো।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)

বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের ব্যানারে হাবিপ্রবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করে। তাদের  কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রমও। তবে খোলা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং স্বাভাবিক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল। 

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে হাবিপ্রবি প্রগতিশীল কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি কৃষিবিদ মো. ফেরদৌস আলম বলেন, আমরা কখনোই এমন কর্মবিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচিতে আসতে চাইনি। কিন্তু আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের নায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য। আমরা নিয়মিত দাপ্তরিক কাজ করে এই সোনার বাংলা বিনির্মানে গর্বিত অংশীদার হতে চাই। 

এদিকে এ সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন। তারা জানান, এভাবে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি দীর্ঘদিন চললে সেশনজট বৃদ্ধি পেতে  পারে। তবে শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের আন্দোলনকে যৌক্তিক। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের যেন উদ্ভুত সমস্যা দ্রুত সমাধান করে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স)

সরকার কর্তৃক জারিকৃত বৈষম্যমূলক সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা প্রজ্ঞাপন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহারের দাবিতে বুটেক্সের কর্মকর্তারা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন। এছাড়া সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

এ সময় কর্মকর্তারা বলেন, এ প্রজ্ঞাপনে যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি বহাল থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষক, কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করবে না। ফলে এক ধরনের মেধাশূণ্যতা দেখা দিবে এবং জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

তাদের কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রত্যয় স্কীম থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ন্তভুক্তি বাতিল; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত অভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন নীতিমালা বাতিল অথবা ইতোপূর্বে কর্মকর্তা ফেডারেশন কর্তৃক দাবিকৃত ১২ দফা অর্ন্তভূক্তকরণ; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রদান; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের অবসরের বয়সমীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণ।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর ১৩ মার্চ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর এতে ‘প্রত্যয় স্কিম’ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্তর্ভূক্তির শুরু থেকেই এই ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে এ সংগঠনগুলো দাবি আদায়ে বেশকিছু কর্মসূচি পালন করে।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়