ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী কলেজ

অধ্যক্ষ পুত্রের বিয়েতে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা চাঁদা চেয়ে নোটিস 

সোহরাওয়ার্দী কলেজ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪০, ৪ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২১:৫২, ৪ জুলাই ২০২৪
অধ্যক্ষ পুত্রের বিয়েতে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা চাঁদা চেয়ে নোটিস 

অধ্যক্ষ পুত্রের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাধ্যতামূলক চাঁদা চেয়ে নোটিস দিয়েছে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রধান সহকারী মামুন। গত ২৪ জুন প্রধান সহকারী নোটিসে স্বাক্ষর করলেও বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি জানাজানি হয়।

জানা গেছে, আগামী ১২ জুলাই বেইলি রোডস্থ অফিসার্স ক্লাবে সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসীন কবিরের ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধান সহকারী স্বাক্ষরিত নোটিসের মাধ্যমে কলেজের সব কর্মচারীদের বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মধ্যে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা শুভেচ্ছা উপহার চাওয়া হয়। এ টাকাটি কলেজের ক্যাশ সরকার মো. আবুল হোসেনের নিকট জমা দিতে অনুরোধ করা হয়। তবে নোটিসে তারিখের জায়গায় বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এর পরিবর্তে ভুল করে বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) লেখা হয়েছে।

নোটিসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা সমালোচনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সোহরাওয়ার্দী কলেজ পরিবার গ্রুপে পোস্ট দিয়ে বলেন, অধ্যক্ষ মহোদয়ের ছেলের মুসলমানীতে সাধারণ কর্মচারী থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা নিবেন। আর কত ছোটলোকি কাজ করবেন? একজন স্টাফ ৭-৮ হাজার টাকা বেতন পান। তার থেকে আপনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাবদ টাকা নেন। যেদিন থেকে আপনি কলেজে যোগদান করছেন, সেদিন থেকে কলেজের ফলাফল ভালো না। মহসিন স্যার, পারলে গরীব স্টাফদের মুক্তি দেন, না হয় পদত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে কলেজের এক কর্মচারীকে কল দিলে তিনি নিজেকে নিরীহ বলে দাবি করেন। চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ নিয়ে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ভাই, উনারা বলেছেন টাকা না দিলে নাকি আমাদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। আমরা কি করবো? আমাদের করার কিছু নেই।

আরেক কর্মচারী বলেন, নোটিসে বাধ্যতামূকল কথাটি লেখা ঠিক হয়নি। কলেজের অধ্যক্ষ স্যারের ছেলে বিয়ে, আমাদের দাওয়াত করেছে। আমরা তো এমনিই খুশি। এখানে ৫০০ টাকা কোনো বিষয় না।

নোটিসের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান অফিস সহকারী মামুন এই প্রতিবেদককে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি আমদের স্টুডেন্ট? আসেন কলেজে আসেন, কথা বলি।’

প্রতিবেদক ব্যাধ্যতামূলক ৫০০ টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা তো সমাজিক প্রথা। সাধারণ কর্পোরেটে এভাবে হয়। আসেন কলেজে সামনাসামনি কথা বলি। আমি টেলিফোনে এতো কথা বলতে রাজি না।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোহসীন কবির বলেন, ‘আমি মাত্রই বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রধান সহকারীকে জিজ্ঞেস করেছি, কেনো এমন নোটিস দেওয়া হলো? উত্তরে প্রধান সহকারী বলেন, আমরা প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই এমন করে থাকি, যারা পারে তারা দেয়!’

বাধ্যতামূলক দিতে হবে এমন লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা হয়তো তার ভুল হয়েছে। তবে আগামীকাল অফিসে গিয়ে আমি তাকে শোকজ করবো এবং জানতে চাইবো, কেনো সে এমনটি করেছে! সে যদি এ বিষয়ে কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ছেলের বিয়ের বিষয়ে অধ্যক্ষ উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনার কি মনে হয় আমি ৫০০ টাকার জন্য আমার ছেলের বিয়ের আয়োজন করেছি? অবশ্যই না। উল্টো সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, বিয়েতে আশার সময় কেউ যাতে কোনো উপঢৌকন না নিয়ে আসে।’

/ইয়াছিন/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়