ঢাকা     রোববার   ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ৩০ ১৪৩১

জাবিতে আবারও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৫ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ০০:৫৩, ১৬ জুলাই ২০২৪
জাবিতে আবারও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত অর্ধশত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা আগে মিছিল শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু হলের কাছে আসলে শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা হয়।

এর আগে, বিকেল ৪টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়।  পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ি এ হামলায় ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। 

এদিকে দুই পক্ষের পূর্বঘোষিত পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচির বিষয়ে আগে থেকে জানা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে প্রক্টরের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের মিছিলটি বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন এলাকায় পৌছালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাইট অফ করে দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে হামলা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলা হয়েছে। আমরা এ নির্মম সন্ত্রাসী হামলার বিচার চাই।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, ঘটনার আধাঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে ১০ মিনিট অবস্থানের পর রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা আহত হলে তাকে প্রক্টর আলমগীর কবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসেন।

এদিকে সংঘর্ষের দীর্ঘক্ষণ পরে প্রক্টর আসায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এসময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবি করেন এবং তার ইন্ধনে এ হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসতে দেখা যায়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুর রশীদ জিতু, মাহফুজ ইসলাম মেঘকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. অমিতাভ জানান, আমি রাত ৮টার সময়ে এসে অন্তত ২০-৩০ জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছি৷ রাত সাড়ে ৮টায় মেডিক্যাল সেন্টারে সর্বশেষ তথ্যমতে, অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে, গুরুতর আহত অবস্থায় অন্তত ২০-২৫ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ও সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার আহত হয়ে এখানে এসে চিকিৎসা নেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু হল এলাকায় আসলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগে থেকেই লাঠিসোটা নিয়ে প্রস্তুত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আগে থেকে জানা সত্ত্বেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে৷

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে বের হয়েছি। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল নিজে আক্রমাণত্মক হয়ে আমাদের উপর হাত তুলেছেন। তারা সবাই মিলে আমাদের হত্যার করার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের মুখ কাঁদার মধো ডুবিয়ে রেখেছিলো, যাতে দম নিতে না পারি। আমাদেরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। এ হত্যাচেষ্টার বিচার এই স্বাধীন বাংলার মাটিতে করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর বলেন, প্রোগ্রামটি নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে শুরু করেছিলো। আমরা এদিকে আসছিলাম। কিন্তু গাড়ি আটকা পড়ায় গাড়ি থেকে নেমে যতটুকু সময় লেগেছে, এর মধ্যেই এসব ঘটনা ঘটছে। আমরা পুরো বিষয়টা অবজার্ভ করছি।

/আহসান/মেহেদী/

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়