ঢাকা     রোববার   ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

জাবি প্রশাসনের শোক প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০১, ৩০ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২১:২৪, ৩০ জুলাই ২০২৪
জাবি প্রশাসনের শোক প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে সরকার ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শোক পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। তবে এ শোক কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করে 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে মৌন মিছিল করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসনের শোক পালনের বিষয়টি জানানো হয়।

জনসংযোগ দপ্তর প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত শোক কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

অন্যদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন, আটকের প্রতিবাদ জানিয়ে ও শোক কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে মৌন মিছিল করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ। এসময় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেধে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহিদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে গিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এসময় দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুর করার নিন্দা জানানো হয়।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, গত দুইদিন আগে ছয়জন সমন্বয়কারীকের ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সেই বক্তব্য প্রত্যাক্ষিত হতে দেখেছি। এ আন্দোলনটি ছাত্র সমাজের আন্দোলন। সমন্বয়কারীরা ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং তাদের কোনো কথা থাকলে ছাত্রদের কাছে এসে বলতে হবে। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোনো কথা বললে সেটি ছাত্র সমাজ গ্রহণ করবে না।

তিনি আরও বলেন, আজ সরকার শোক ঘোষণা করেছে। যে সরকার এখন পর্যন্ত আন্দোলনে শহিদদের তথা যাদের জন্য শোক ঘোষণা করেছে, তাদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী সরাসরি জড়িত সে শোক ছাত্র সমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, আজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় স্লোগান দেখে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে কি ৯০’র গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে। দুঃখের সঙ্গে সেই দায় নিয়েই বলতে হচ্ছে- সব রাজনীতিবিদ স্পষ্টভাবে একটি বার্তা বুঝে নিন, সংখ্যা কোন বিষয় নয়। যখন একটি শিশুর লাশ পড়ে যায়, তখন সব সচেতন মানুষ একত্রিত হয়ে যায়। আজ যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে, এগুলোর সমাধান করে নিজেদের দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন, আমাদেরকেও বাঁচান।’

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা ও আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। ৭১’র কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহামম্দ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।

/আহসান/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়