ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৯ ১৪৩২

মানববন্ধনে অংশ নিতে কুবি শিক্ষকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ

কুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১১, ১ আগস্ট ২০২৪  
মানববন্ধনে অংশ নিতে কুবি শিক্ষকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ

দেশব্যাপী শিক্ষার্থী হত্যা, নিপীড়ন ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষকরা। তবে এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে শিক্ষকদের বাধা প্রধান করেন সরকার দলীয় সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ফলে মাত্র ছয়জন শিক্ষকই এ মানববন্ধনে অংশ নিতে পারেন ।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে উপস্থিত শিক্ষকরা হলেন- বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শিলা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক জয় রাজ বংশী, বাংলা বিভাগের প্রভাষক গোলাম মাহমুদ পাভেল।

এ সময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন বলেন, আমরা আজ সবাই এখানে দাঁড়িয়েছি একটা বিচারহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। শুধু নিজের মৌলিক অধিকার চাইতে গিয়ে যেভাবে শতশত শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ সেখানে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবকদের মেরে ফেলা হয়েছে, সেটা গণহত্যা। এ গণহত্যার মধ্য দিয়ে একবারে নিজের ক্ষমতার চর্চা করা হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এ নির্মম গণহত্যার বিচার চাই।

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গত ১৮ জুলাই কোটবাড়ী বিশ্বরোডে পুলিশের গুলিতে আহত সারাফ সামির জামান মেঘের মা ড. কামরুন নাহার শিলা  বলেন, আমার সন্তানও আহত হয়েছে, আমি সে কারণে আসিনি। শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের উপর যে নিপীড়ন, শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে সব শিক্ষকদের মত আমিও মর্মাহত ছিলাম। আমাদের আরও আগেই নামা উচিত ছিলো। আমরা আসলে লজ্জিত। আমার নিজের জীবনে যেহেতু একটা দুর্বিপাক ঘটে গেছে, এর কারণে আমি আগে পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমার ছেলে আহত হয়েছে। আমার ছেলে মারাও যেতে পারতো। সেদিন বুঝতে পেরেছি এতো এতো শিক্ষার্থীদের পরিবার কি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছে! আমার ছেলেটাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে। আমরা দেখেছি নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর কীভাবে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হল ভূঁইয়া বলেন, কর্মসূচি সকাল ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আমরা করতে পারিনি। আমাদের অনেক সহকর্মীকে কোটবাড়িতে আটকে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক পরিচয় দিলেও তাদের কর্মস্থলে আসতে দেওয়া হয়নি। প্রক্টরকে জানানো হলেও আসতে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না? 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পলিটেকনিক মোড়, ক্যাডেট কলেজ মোড় ও আনসার ক্যাম্পের সামনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সব ধরনের যানবাহন চেক করছেন। যারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিমুখে যেতে চাচ্ছেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র, শটগানসহ নানা আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়।

সরকার দলীয় অংগ সংগঠনের বাধার মুখে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হলেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম, অধ্যাপক খলিফা মোহাম্মদ হেলাল, আনোয়ার হোসেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

আনসার ক্যাম্পের মোড়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. আমিনুল ইসলাম টুটুল নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছেন। ক্যাডেট কলেজ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান  আহমেদ নিয়াজ পাবেল নেতাকর্মীদের দাঁড়িয়ে আছেন। মুঠোফোনে আহমেদ নিয়াজ পাবেল জানান, কোনো শিক্ষককে তারা  ফিরিয়ে দেননি। জামায়াত-বিএনপি যেন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য তারা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, আমরা কোটবাড়িতে আসার পর কয়েকজন মানুষ আমাদের পথরোধ করেন। আমরা শিক্ষক পরিচয় দিলেও নমনীয় হননি তারা। আমাদেরকে শহরের দিকে চলে যেতে বলেন। আমাদের চলে যেতে বলার তারা কারা? আমরা প্রক্টরকে জানিয়েছি, রেজিস্টারকে জানিয়েছি। দীর্ঘ এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোন পুলিশ বা কারো থেকে কোনো সাহায্য আসেনি। আমাদেরকে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।'

কুমিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, একজন শিক্ষক জানিয়েছিলেন যে উনি আসতে পারছিলেন না। সঙ্গে সঙ্গে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব ক্যাম্পাসের ভিতরে। বাইরে যদি কোনো ঘটনা ঘটে সেটার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করি। সেটা আমরা করেছি।'

সদর দক্ষিণ থানার অফিসার্স ইনচার্জ আলমগীর ভূইয়া বলেন, সরকার দলীয় লোকেরা শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আসতে বাধা দিচ্ছে- এমনটা জানিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আমি একটু আগে ঘুরে আসলাম এমন কিছু লক্ষ্য করিনি।

/এমদাদুল/মেহেদী/

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়