রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চান কুবি ও বাকৃবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
কুবি সংবাদদাতা ও বাকৃবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হল। ছবি: প্রতিকী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র ও শিক্ষকসহ সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের দাবি তুলেছেন। তারা কোনোভাবেই দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার বরাবর দুটি পৃথক স্মারকলিপিতে শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি করেছেন।
দুইটি স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন- শিক্ষক রাজনীতি ও ছাত্র রাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ রাখতে হবে। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ সব অঙ্গ সংগঠনের ছাত্র রাজনীতিমুক্তকরণ শিক্ষার্থীদের একনিষ্ঠ দাবি। কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে না।
সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে রাজনৈতিক কোনো দলের কর্মী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি রাখতে হবে। অতিদ্রুত প্রশাসনকে ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুবি সমন্বয়কদের অন্যতম মোহাম্মদ সাকিব হোসেইন বলেন, আমাদের আন্দোলন সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা এখনো চলমান। আমরা চাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্র কেউ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকুক। এ জন্যই আমরা আজ প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।
এদিকে, শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি করতে বাকৃবির সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছাত্র-শিক্ষকসহ সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষকও।
রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতির চর্চা বন্ধ হলে দলীয় রাজনীতির অপচর্চা ও অপতৎপরতা বন্ধ হবে। দলীয় ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা উচিত, যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবি নিয়ে কথা বলবেন। যারা হলের বাহিরে অবস্থান করছে, তাদেরকে হলে উঠানোর দায়িত্ব সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামসুন নাহার অয়ন্তী বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পায়। গত ক্ষমতাসীন দল সেটা বহুলাংশে প্রমাণ করে দিয়ে গেছে। ঠিক এই কারণে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা আশঙ্কা করি সামনের দিনগুলোতেও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ছাত্র রাজনীতির ছায়াতলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর জুলুম করবে। আর শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য কোনো রাজনৈতিক ট্যাগের প্রয়োজনীয়তা নেই কোটা সংস্কার আন্দোলনই তার প্রমাণ। আমরা সবাই একটি বৈষম্যহীন ও সাম্যবাদী ভবিষ্যতের আশা রাখি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রভাষক মোছা. লতিফা আক্তার বলেন, আমি নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চাই না। আমি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মাঝেও সবসময় সেটা প্রমোট করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে, বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী রাজনীতি করতো। একই বিষয় আবার জুনিয়র শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও আছে। ইচ্ছে না থাকলেও শিক্ষকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপে নাম লিখাতে হয়। কিন্তু সবকিছু দেখার পর আমার সবসময় এটাই মনে হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কোনো রাজনীতিই থাকা উচিত না। কারণ শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক ছাত্রছাত্রীর ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যায় এই রাজনীতির জন্য এবং শিক্ষকদের মান মর্যাদা নষ্ট হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক বলেন, বিশ্ব র্যাংকিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং মানসম্পত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক মুক্ত থাকা চাই। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব ও দক্ষতা উন্নত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকসু সমিতি, ছাত্র সংসদ, শিক্ষক সমিতি এবং কর্মকর্তা-কর্যচারীদের আলাদা আলাদা সমিতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে তা দলীয় রাজনীতি মুক্ত হতে হবে। আমরা চাই না আমাদের কোন সন্তান দলীয় রাজনীতির নির্মমতার শিকার হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতির কারণে অনেক শিক্ষকের প্রমোশন আটকে থাকে। আবার অনেকে রাজনীতির কারণে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ সব কারণে সবাই দলীয় রাজনীতিতে আগ্রহী অনেকটা বাধ্য হয়েই।
/এমদাদুল/লিখন/মেহেদী/