ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৯ ১৪৩২

রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গণের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ১২ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫৩, ১২ আগস্ট ২০২৪
রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গণের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানিয়েছেন। রাইজিংবিডির প্রতিনিধিদের খবরে থাকছে বিস্তারিত-

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)

শিক্ষার আলো যথাযথভাবে ছড়াতে সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চান বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি- বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করার জায়গা, রাজনীতি জন্য বিশ্ববিদ্যালয় না। রাজনৈতিক চর্চার জন্য ছাত্র সংসদ ব্যতীত কোনো দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বা শিক্ষক রাজনীতি থাকবে না।

তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি থাকলে দলের একটা প্রভাব থাকে। এতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যের উপর প্রভাব খাটানো হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীল পরিস্থিতি নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্বিবদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকল পর্যায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তারা।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মামুন বিল্লাহ বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ চাই। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা শিক্ষক সবাইকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, তারা জনগণের সেবক। তারা জনগণের প্রভু না। তাই সেবক হিসেবে সবার সঙ্গে আচরণ করতে হবে, প্রভু হিসেবে নয়।

লেজুরভিত্তিক রাজনীতির বাহিরে গিয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি জানিয়েছে অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সব ধরনের রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই আমরা। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ চাই। ছাত্র সংসদে যারা নির্বাচিত হবে তারা কোনো কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না। শিক্ষক রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতি দুটোই নিষিদ্ধ হোক।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)

খুবি শিক্ষকরা দলীয় রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন, বৈষম্যহীন সমাজ ও দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দাবি নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। তারা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে খুবি শিক্ষকরা তিনটি দাবি নিয়ে মানববন্ধন ও র‍্যালি করেন। পরে রেজিস্ট্রার বরাবর শিক্ষক রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন চেয়ে সবার স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

স্মারকলিপিতে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন- স্বাধীনতার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরদ্ধে এদেশের মানুষ বার বার সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে। বিদেশী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। মানুষ ভেবেছিল তারা শোষন, বঞ্চনা, দুর্নীতি, লুট-পাট থেকে মুক্তি পাবে, কিন্তু তারা পায়নি। এ দেশীয় স্বৈরশাসকরা বারবার একইভাবে মানুষের উপর জুলুম, নির্যাতন, স্বৈরশাসন কায়েম করেছে। মানুষকে দাসে পরিনত করা হয়েছে। সত্য-ন্যায়ের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। শত-শত প্রাণের বিনিময়ে আজ এ দেশে নতুন সূর্য উদয় হয়েছে। মানুষ আর ঠকতে চায় না। তারা চায় একটি শোষণহীন, বৈষম্যহীন আলোকিত বাংলাদেশ, সোনার বাংলাদেশ। স্মারকলিপিতে বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, আমাদের উঠে দাঁড়ানোর জন্য এটাই সঠিক সময়। দেশে সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশে আমি মনে করি সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের আশাহত হলে হবে না। আমি পুরো বাংলাদেশ ঠিক করতে পারবো না। সেই ক্ষমতা আমার নেই। তবে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারবো এবং আমার এলাকায় কাজ করতে পারবো। আমরা যদি যার যার এলাকায় যার যার প্রতিষ্ঠানে এই স্বচ্ছ ও ন্যায় কে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলেই সুন্দর একটি বাংলাদেশ হবে।

তিনি আরও বলেন, এ আন্দোলনে শত শত সন্তান প্রাণ দিয়েছে। আমাদের সন্তান আত্মীয়-স্বজন কেউ শহিদ হয়নি। তাই আমরা এ উপলব্ধি বুঝতে পারছি না। যে সন্তান হারিয়েছে, যে ভাই হারিয়েছে, যে বোন হারিয়েছে; সে বুঝছে এর মর্মবাণী কতটুকু। আমরা কিন্তু তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা আন্দোলন করেছে তাই সফলতা এসেছে। আমরা যদি সেটা এগিয়ে নিতে না পারি, তাদের রক্তের প্রতি অপমান করা হবে, বেঈমানী করা হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে জাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পাশাপাশি ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজীবনের জন্য তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এ দাবি জানান। 

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, শুধু ছাত্র রাজনীতি না, সব ধরনের দলীয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি সুস্পষ্টভাবে জানাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখা। যতদিন পর্যন্ত না দেশে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি রিফর্মেশন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের এ দাবিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানাচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, এক্সক্লুসিভলি ছাত্রলীগ ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় ও ওইদিন রাতে এবং পরবর্তীতে সব হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বাইরে গিয়েও ছাত্রলীগকে কোনো ছাত্র সংগঠন হিসেবে দেখছে না, এটিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করছে।

পটুয়াখালী সরকারি কলেজ

সরকারী কলেজে ছাত্র ও শিক্ষকদের রাজনী‌তি বন্ধ এবং কলেজ সংস্কা‌রসহ আটদফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করছে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১২টায় সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন কেএম সায়েম, আতিকুর রহমান আসিফ, মিরন মাহমুদ, তাজুল ইসলাম তপু, উর্মি, শাহিন, শাহরিয়ার শাকিব, জাকারিয়া প্রমুখ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, মেয়াদোত্তীর্ণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক পরিষদ বাতিল করা,  ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়ন করা এবং হয়রানি ও প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

/হৃদয়/হাসিব/ইমরান/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়