জাবিতে টিএসসি পরিচালকসহ ৩ অধ্যাপকের পদত্যাগ দাবি
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ রেজা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ রেজা ও অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফুল হাবিবের পদত্যাগ দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে তারা এ দাবি করেন।
এছাড়া, শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলায় উস্কানিদাতার অভিযোগ এনে জাবির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৮ আগস্ট) পৃথক কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ওই তিন অধ্যাপকের পদত্যাগ দাবি করেন।
জানা গেছে, উত্তরণ নামের সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানাশোনা সত্বেও সংগঠনটিকে প্রথম কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের এর আগের পরিচালক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবির। এরপর অধ্যাপক আহমেদ রেজা পরিচালকের দায়িত্বে আসলে তিনি এটিকে টিকিয়ে রাখেন। রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে অবস্থিত উত্তরণের কক্ষে তল্লাশি চালালে সেখানে ছাত্রলীগের ব্যানার, লাঠিসোঁটা ও লক্ষাধিক টাকার শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা এবং তার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে ছাত্রলীগকে কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই কক্ষে লক্ষাধিক টাকার শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে, যেগুলো গত শীতেই বিতরণ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এখানে উত্তরণ নামের সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতো সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ। পাশাপাশি উত্তরণের নামে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালকের সরাসরি সংযোগ ছিল। অধ্যাপক আহমেদ রেজা কেন্দ্রটি পরিচালনার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা এই অকার্যকর পরিচালকের দ্রুত পদত্যাগ দাবি করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম আহমেদ বলেন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক আশরাফুল হাবিবকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার মদদ দেওয়ায় তাকে তার নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। তিনিও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকার যোগ্যতা করেছেন। আমরা অধ্যাপক আহমেদ রেজার পাশাপাশি তারও পদত্যাগ দাবি করছি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আহমেদ রেজা বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি চায়, তাহলে আমি পদত্যাগ করবো। শিক্ষার্থীদের কাছে যেন কোনো ভূল ম্যাসেজ না যায়। আমি আন্দোলনের পক্ষেই ছিলাম। আন্দোলনের সময় জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার যখন পথনাটকের আয়োজন করেছিল, তাদেরকে ২ হাজার টাকা দিয়ে আমি সহায়তা করেছি। শিক্ষার্থীরা যদি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আমি প্রস্তুত।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যাপক আহমেদ রেজাকে টিএসসিতে পাওয়া যায় না। তাকে মোবাইলে ফোনেও পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখি না, বাসায় রেখে বের হই। রাতে বাসায় ফিরে এক এক করে কল ব্যাক করি।
এদিকে, সকাল সাড়ে ১১টায় দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনে বিভাগের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহিদ মিনারে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো- অতিদ্রুত ছাত্র সংসদ চালু করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, সাম্প্রতিক অরাজক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছ তা অতিদ্রুত পুষিয়ে নিতে হবে এবং বিভাগের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা সঠিক সময়ে নিতে হবে।
সমাবেশে দর্শন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সামিহা তাসনিম বলেন, গত ১৫ জুলাই রাতে ও ১৬ জুলাই ভোর রাতে আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থী উপর অতর্কিত ও নারকীয় আক্রমণ চালায়। এতে আহত হয় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এই নারকীয় আক্রমণের পর যখন সব শিক্ষক আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান, তখনও তিনি আমাদের বিরোধিতা করেন এবং রাজাকার আখ্যা দেন। এমনকি ১৭ জুলাই যখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করে, তখন তিনি বাধা না দিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালিয়ে যেতে বলেন। এমন নীতিবর্জিত কাউকে আমরা আমাদের বিভাগে চাই না। তাকে প্রকাশ্যে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং দ্রুত নিজ পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে।
পরে শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড মুনির হোসেন তালুকদারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।
/আহসান/মেহেদী/