জবি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। একই সঙ্গে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সবাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী পদত্যাগ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শূন্যতার সুযোগ নিয়ে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন, যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রার ও বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগসহ নানা ধরনের অনিয়ম শুরু করেছেন তিনি। তার এসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় আইনের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট উপাচার্যের পদত্যাগের পর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারে শুরু করেন আইনবহির্ভূত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। জবি আইন-২০০৫ অনুযায়ী প্রশাসনিক পদসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ ও দায়িত্ব বণ্টনের এখতিয়ার কেবল উপাচার্যের। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহিদ আলমকে পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।
এছাড়া গত ১৫ আগস্ট ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীনকে বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। ওই অফিস আদেশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহিদ আলমের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। এ অফিস আদেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫-এর ২৪(২) ধারার কথা উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু ধারাটিতে বলা হয়েছে, ‘বিভাগীয় অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বছরের জন্য উপাচার্য কর্তৃক বিভাগীয় সভাপতি নিযুক্ত হবেন।’ অর্থাৎ বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার শুধু উপাচার্যের। কোষাধ্যক্ষ বা রেজিস্ট্রার কোনো নিয়োগ দিতে পারেন না।
এদিকে অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীনকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রক্রিয়াটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তিনি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সঙ্গে একটা সাংঘর্ষিক বিষয় আছে। আমি এখনও দায়িত্বভার নিইনি। আইনের বিষয়টি পর্যালোচনা করার পর দায়িত্ব নেব কি-না ভেবে দেখব।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী, কোষাধ্যক্ষের এসব পদে নিয়োগ কিংবা দায়িত্বভার প্রদানের এখতিয়ার নেই। কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য থাকলে কিংবা তার অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হলে সে ক্ষেত্রেই উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করতে পারেন কোষাধ্যক্ষ। অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে এখনও ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫-এর ১০ (৩) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্যের পদ শূণ্য হলে আচার্যের ভিন্ন মত না থাকা সাপেক্ষে কোষাধ্যক্ষ উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে উপাচার্য সাদেকা হালিম ১১ আগস্ট পদত্যাগ করলেও ১৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগ গ্রহণ করেননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করে পরিপত্র জারি করলেও সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম নেই। অর্থাৎ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি এখনও শূন্য হয়নি। সে ক্ষেত্রে এই ধারা অনুযায়ী কোষাধ্যক্ষ রেজিস্ট্রার হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, উপাচার্য সাদেকা হালিম ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও এখনও আচার্য তা গ্রহণ করে পরিপত্র জারি না করায় তার পদ শূন্য হয়নি। এমনকি আচার্য কোষাধ্যক্ষকে ভারপ্রাপ্ত কিংবা রুটিন দায়িত্ব পালনের আদেশও দেননি। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের লঙ্ঘন। অফিসের কাজের জন্য একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে এমনিতেই দায়িত্ব দিলে হতো। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে কাউকে রেজিস্ট্রার হিসেবে রুটিন দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসব নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী পরবর্তী উপাচার্য দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেলেও শুধু রুটিন ওয়ার্ক করতে পারবেন। তিনি তো সেই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বও পাননি। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের লঙ্ঘন। জরুরি পরিস্থিতিতে যে সব আইনের কথা বলা আছে, সে সব আইনের শর্তও পূরণ হয়নি; এটি বেআইনি।
আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রারের রুটিন দায়িত্ব পাওয়া মোহাম্মদ জাহিদ আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রুটিন দায়িত্ব হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ঠিক হয়েছে কি-না সেটি কোষাধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারবেন। আমার এ বিষয়ে জানা নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দায়িত্ব বিশেষ বিবেচনায় চলতি সময়ে রুটিন দায়িত্ব হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী উপাচার্য দায়িত্বে না আসা পর্যন্ত তারা এ দায়িত্বগুলো পালন করবেন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই এ দায়িত্বগুলো দেওয়া হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী নিয়োগগুলো বৈধ কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রুটিন দায়িত্বে আচার্য দ্বিমত পোষণ করে না থাকলে তারা কাজ করতে পারবেন। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবদিক বিবেচনা করে একটি চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে।
/লিমন/মেহেদী/