ঢাকা     সোমবার   ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শহিদি মার্চ পালিত

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শহিদি মার্চ পালিত

ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের একমাস পূর্ণ হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শহিদি মার্চ পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ কর্মসূচি পালিত হয়। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)

ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিকেল ৩টার দিকে এ কর্মসূচি পালন করেছে হাবিপ্রবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শহিদি মার্চটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে টিএসসি, লাইব্রেরি, প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে সমাবেশে মিলিত হয়।

মার্চ চলাকালে ‘আমার ভাই কবরে,খুনী কেন বাহিরে’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘এই যুদ্ধে জিতবে কারা, আমাদের শহিদেরা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ৫ জুলাই এখানে অধিকার আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম সমবেত হয়েছিলাম। আমরা আমাদের নায্য অধিকারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের অধিকার মেনে না নিয়ে রাজাকার বলেছে, আমাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। তবুও আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে সফল হয়েছি। ঘরে বসে ফেসবুকে দুটি লাইন বা রিলস শেয়ার করলেই শহিদদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া যায় না। যে সব শহিদদের জন্য আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের যথোপযুক্ত সম্মান দিতে হবে। আর কেউ যদি কোনো ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করে, তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)

বিকেল ৩টার দিকে বাকৃবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগহণে শহিদি মার্চ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড় থেকে একটি মিছিল নিয়ে দেবদারু সড়ক হয়ে শহিদ মিনারের সামনে যান শিক্ষার্থীরা। একই সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে শহিদ মিনারে আসেন। পরে শহিদ মিনার থেকে সম্মিলিত মিছিলটি কেআর মার্কেট ঘুরে আবার শহিদ মিনারে এসে শেষ হয়। সেখানে শহিদদের স্মরণে দোয়া করা হয়।

মিছিলে ‘শহিদের স্বপ্ন, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘লাখো শহিদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ ও কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির, প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী।

শহিদদের জন্য দোয়ার পূর্বে কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. হারুন-অর-রশিদ বলেন, খুনি হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষকে হত্যা করেছে। যাদের প্রাণ উৎসর্গের মধ্য দিয়ে আমরা আজকের স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই মহৎ প্রাণের স্মরণে আজকের এ দোয়া অনুষ্ঠান। আমরা তাদের এই ত্যাগ কিছুতেই বৃথা যেতে দিবো না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)

দুপুর ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠাল তলায় সমবেত হয়ে সেখান থেকে একটি মিছিল বের করেন জবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার ও দয়াগঞ্জ হয়ে যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে অবস্থান করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, এক মাস যে হয়ে গেল’, ‘এক মাস যে হয়ে গেল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘বৃথা যেতে দেব না জবিয়ানের রক্ত’, ‘সাজিদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘মেহেদির রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘ফেরদৌসের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘দিয়েছি তো রক্ত আরো দিব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সমাবেশে মাসুদ রানা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিভিন্ন সময় পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। বাংলাদেশের সাম্য ও মানবিকতা ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই বাংলাদেশের ছাত্র জনতা এ অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে। একইভাবে, আশির দশকের এরশাদের স্বৈরাচারি শাসন যারা আবার বাংলাদেশে কায়েম করেছিলেন ছাত্র জনতা তাদের রুখে দিয়েছে। এ বাংলাদেশে কোন বিশেষ দলের না, এ দেশ জনগণের। ছাত্র জনতা সবাই মিলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব।

ফরহাদ হোসেন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, আমরা তাদের যেন ভুলে না যাই। ছাত্র জনতার আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের দিকে যেন নজর দেওয়া হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)

শহিদি মার্চ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দুপুর ৩টা থেকেই রাজশাহীর তালাইমারি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শহিদদের স্মরণে তাদের হাতে ছবি, প্ল্যাকার্ড ও বিভিন্ন স্মারক নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।

মিছিলে ‘শহীদের স্মরণে, ভয় করিনা মরণে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’সহ নানা স্লোগান দেন তারা।

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মেশকাত চৌধুরী বলেন, স্বৈরশাসক ফ্যাসিবাদী হাসিনাকে আমরা যেভাবে টেনে হিঁচড়ে বিতাড়িত করেছি। আগামীতে  যদি কেউ এ রকম করে, তাহলে ছাত্র জনতা আবারও তাকে বিতাড়িত করবে। দেশটাকে গঠন করতে হলে সবার আগে নিজেকে গড়তে হবে। গত ১৫ বছর ধরে হাসিনা তার লোকজন নিয়ে দেশটাকে লুটেপুটে খেয়েছে। ১৯৭১ সালে দেশটা যখন স্বাধীন হলো মুজিব তখন বলেছিল, এতোদিন অন্যরা খেয়েছে এখন আমার লোকেরা খাইবো। এখন আপনারা যদি বলেন এতোদিন আওয়ামী লীগ খেয়েছে, এখন ছাত্ররা খাবে; এটা কখনোই বলা যাবে না।

তিনি বলেন, আমাদের হাজারো ভাই জীবন দিয়েছেন দেশটাকে গড়ার জন্য। এখনো শহিদি মিছিল অব্যহত রয়েছে। তাই এই রক্তের সঙ্গে আপনারা বেঈমানি করবেন না। যা কিছু করেন, মনে রাখবেন এটা রক্তের উপর দাঁড়ানো একটা গণঅভ্যুত্থান।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়