ঢাকা     সোমবার   ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

যবিপ্রবির গুরুত্বপূর্ণ ৫ পদে অধ্যাদেশ বহির্ভূত নিয়োগের অভিযোগ

যবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
যবিপ্রবির গুরুত্বপূর্ণ ৫ পদে অধ্যাদেশ বহির্ভূত নিয়োগের অভিযোগ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অধ্যাদেশ বহির্ভূতভাবে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর যবিপ্রবির আর্থিক ও প্রশাসনিকের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনের নির্দেশে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ নিয়োগ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি অনুষদের ডিন, একটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও একটি ইনস্টিটিউটের পরিচালকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৩(৫) ধারা অনুসারে যবিপ্রবি ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন পদে জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি (জিইবিটি) বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল আমিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলি, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন পদে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. কামাল হোসেনকে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৫(২) ধারা মোতাবেক তিন বছরের জন্য পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তোফায়েল আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া ওইদিনই আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জিইবিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শেখ মিজানুর রহমানকে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করে জানা যায়, যবিপ্রবির আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. জাকির হোসেন কর্তৃক তিনটি অনুষদের ডিন ও একটি বিভাগের চেয়ারম্যানের নিয়োগের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে উপাচার্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারেন। ডিন নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৩(৫) ধারাতে উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেক অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং উপাচার্য কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত অধ্যাপকদের মধ্যে উহার ডিন পদ আবর্তিত হইবে এবং তিনি দুই বৎসরের মেয়াদে তাহার পদে বহাল থাকিবেন।’ এছাড়া বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৫(২) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্য হইতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বৎসরের মেয়াদে উপাচার্য কর্তৃক বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত হইবেন।’

অপরদিকে, গত ২৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক পরিপত্রে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষরা পদত্যাগ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ অন্য কর্মকর্তারা পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে তাদের পদত্যাগ ও অনুপস্থিতিজনিত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্তে নিয়মিত উপাচার্যের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিল, ক্ষেত্রমতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনাক্রমে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পরামর্শ দেওয়া হলো।

এ বিষয়ে ডিনস কমিটির আহ্বায়ক এবং জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী উপাচার্য বা উপ-উপাচার্য ছাড়া অন্য কেউ এমন নিয়োগ দিতে পারেন না। তবে জরুরি প্রয়োজনে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলো মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সীমিত পরিসরে দায়িত্ব দিতে পারেন। কিন্তু কয়েকটি পদে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। তাছাড়া আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে কি কি করতে পারবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা নেই আমার।

আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বের ক্ষমতাবিধি সর্ম্পকে অবগত না হয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়োগের ব্যাপারটি ড. জাকিরের নির্দেশে নোটিশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব। তবে অধ্যাদেশ অনুযায়ী শুধুমাত্র উপাচার্য এ নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বের পদটি উপাচার্য বা উপ-উপাচার্যের পদমর্যাদা বহন করে কিনা, সেটা আমি জানি না। এ পদে থেকে তিনি কোন ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বা কি ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন, সেটা সম্পর্কেও আমার কোনো সঠিক ধারণা নেই। তবে ওই পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে যবিপ্রবির আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নোটিশ উল্লেখিত ২-৩ বছর সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের যে কথাটি উল্লেখ আছে সেটি ভুল। এটি শীঘ্রই পরিবর্তন করা হবে।

তিনি বলেন, আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে কি করতে পারব আর কি করতে পারব না- এ বিষয়ে আমি এখনও স্পষ্ট কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে আমাকে আরও জানতে হবে।

/সজিবুর/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়