ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২ ১৪৩১

দুর্নীতির অভিযোগে রাবি শিক্ষক সুজনকে অপসারণের দাবি

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
দুর্নীতির অভিযোগে রাবি শিক্ষক সুজনকে অপসারণের দাবি

দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনের অপসারণের দাবি করেছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের কাছে লিখিত সাত পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রসহ বেশকিছু তথ্যাদি জমা দিয়েছেন তারা।

এদিকে ওই শিক্ষকের প্রতি তিরস্কার ও ঘৃণা প্রকাশ করে চারুকলা অনুষদ চত্বরে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ড. সুজন সেন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভনীয় আচরণ, শহিদ জিয়াউর রহমান হলে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে এবং প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি করেন। এছাড়া তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সশরীরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপরীতে অবস্থান নেন। দুপুর ১টায় বিভাগের সভাপতির কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি করেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শেণিকক্ষে বসবেন না বলেও জানান। পরে দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্য বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, তিনি শ্রেণিকক্ষে ন্যূনতম শিক্ষাদানে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। কিছু না শিখিয়ে জোরপূর্বক কোর্সের কাজ আদায় করে মনগড়া নম্বর দেন। বিভাগের অন্য শিক্ষকের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে অথবা নিজের মতাদর্শের বাইরের কোনো শিক্ষার্থী থাকলে, তাকে ইচ্ছাকৃত কম নম্বর দেন। তিনি নিজের ইচ্ছামতো বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করতেন। অনেক সময় কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করতেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন চরম অমানবিক। শিক্ষার্থীদের স্বজন মারা যাওয়ার বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করতেন। শিক্ষা সফরে গিয়েও এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিনি অশিক্ষকতাসুলভ আচরণ করেন।

তারা বলেন, বিভাগের পাশাপাশি শহিদ জিয়াউর রহমান হলে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক দুর্নীতি করেন। তিন বছর মেয়াদে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালে নাস্তা, খাবার, ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি, তৈজসপত্রসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয়ের শতকরা ৮০ ভাগ ভাউচারেই তার জালিয়াতি রয়েছে। হল ফান্ডের টাকা থেকে তিনি চকলেট থেকে শুরু করে ওডোনিল, হারপিক, এয়ার ফ্রেশনার, অ্যারোসোল, ডেম ফিক্স ক্রয় করে নিজের বাসার জন্য ব্যবহার করতেন। হলের পিয়নের মাধ্যমে তিনি এ সব বাসায় নিয়ে যেতেন। তার তিন বছরের মেয়াদকালে তিনি প্রায় ৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৯০ টাকা নাস্তা ও খাবার বাবদ ব্যয় দেখিয়েছেন।

অভিযোগে শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, হলের বিবিধ তহবিলের একটি ভাউচারে তিনি ৪ হাজার ২০০ টাকায় দুটি টিস্যু বক্স ক্রয় করেছেন। তিনি ইন্টারনেট, লাইব্রেরি ও ক্রীড়া তহবিল থেকে প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৬১০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যার মধ্যে ইন্টারনেট তহবিল থেকে রাউটার ক্রয় বাবদ আনুমানিক ৩৪ হাজার টাকার দুর্নীতি রয়েছে। ড. সুজন সেন তার মেয়াদকালে নিজের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাভন মেটালিক’ থেকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হলের জন্য তিনি ২ লাখ ২০ হাজার ৫৪৫ টাকার নেমপ্লেট, অনারবোর্ড এবং ক্রেস্ট ক্রয় করেন। এর মধ্যে, তিনি নিজের বিদায়ী স্মারকের জন্য ৬ হাজার টাকা মূল্যের ক্রেস্ট ক্রয় করেন। এছাড়া, হলে নিজের নামের স্টিকার সম্বলিত ২১ হাজার ৭০০ টাকার ভাউচার দিয়ে মগসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয় করেন।

ছাত্র কল্যাণ তহবিলের ৫৩ হাজার ৫০০ টাকার পুরোটাতে প্রায় দুর্নীতি রয়েছে। এ তহবিল থেকে শিক্ষার্থী পরিচয়ে সহযোগিতা চেয়ে ৪৯টি আবেদনের ৪৬টিতেই রয়েছে বিস্তর অসঙ্গতি। এ সব আবেদেনের কোনোটিতেই তারিখ উল্লেখ নেই। সে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ রোল শিক্ষাবর্ষও সঠিকভাবে উল্লেখ নেই। তবুও এই ৪৬টি আবেদনের প্রতিটির জন্য টাকা তোলা হয়েছে। এ সব আবেদনের লেখাগুলোর মধ্যেও মিল রয়েছে। দুয়েকজন ব্যক্তির হাতে অধিকাংশ আবেদন লেখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথিদের রাত্রের জন্য জুবেরী ভবন এবং শহিদ মীর আব্দুল কাইয়্যুম ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরি থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছামতো তিনি হলে অতিথি কক্ষ চালু করেন। হলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এখানে রাত্রিযাপনের জন্য প্রতিরাতে ৩০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেন বলে হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কর্নারের নামে তিনি প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় দেখালেও এখানে বই বাবদ তিনি খরচ করেছেন মাত্র ৪৪ হাজার ৬৯৭ টাকা।

তার তিনবছরের মেয়াদে শহিদ জিয়াউর রহমানে হলে প্রকৌশল দপ্তর থেকে এককভাবে ৩৯ লাখ ২২ হাজার ২০৮ টাকা এবং বিভিন্ন বিভাগ ও হল মিলে সমন্বিতভাবে ১১ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ টাকার কার্যাদেশ আসে। এর বাইরেও প্রায় ৩৩ লাখ টাকার আরেকটি কার্যাদেশ আসে বলে হল সুপার মামুনুর রহমান জানিয়েছেন। তবে সেটির কাগজপত্র ড. সুজন সেন নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। এটি তিনি হল কর্তৃপক্ষের হাতে দেননি। এ সব কার্যাদেশের কাজে হল সংস্কার, ওয়াশরুমে টাইলসসহ অন্যান্য কাজ যথাযথভাবে করেননি তিনি। এ বিষয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে লিয়াজুঁ করে কার্যাদেশের মোট বাজেটের একটা অংশ হাতিয়ে নিয়েছেন হলের অনেকেই জানিয়েছেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. বনি আদম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দেওয়া অনুলিপি পেয়েছি। সোমবার বিভাগের শিক্ষকরা বসে সিদ্ধান্ত নিবো। অধিকাংশ শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

/ফাহিম/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়