ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

স্থানীয়দের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত পবিপ্রবির চিকিৎসক

পবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
স্থানীয়দের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত পবিপ্রবির চিকিৎসক

চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে ২১ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার এটিএম নাসির উদ্দিন। এতে কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারের সেবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

জানা গেছে, চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির বিষয়ে ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী চিকিৎসক ডা. এটিএম নাসির উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারে ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন ডা. এটিএম নাসির উদ্দিন। তার রুমে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে বের করে দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন স্থানীয় মো. সাইফুল ইসলাম মৃধা, মো. মাসুদ মৃধা, মো. জসীম উদ্দীন (কাস্টম জসিম) ও মো. জসিম মিয়া। এ সময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী ডাক্তারকে রুমের দরজা আটকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেন। এমনকি টাকা দিতে না পারলে চাকরি ছেড়ে ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করেন তারা।

পরবর্তীতে এ ঘটনা উল্লেখ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পবিপ্রবির রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অনুমতি চান ডা. নাসির। কিন্ত রেজিস্ট্রারের কাছে আইনগত সহায়তা চাওয়ার পর থেকে অভিযুক্তরা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। এ ঘটনায় তিনি পটুয়াখালী ক্যান্টনমেন্ট জিওসির কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এদিকে, অভিযুক্তরা স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় বলে জানা গেছে। তাদের অভিযোগ, বিএনপির শাসনামলে বিএনপির এক নেতার আত্মীয় পরিচয়ে চাকরিতে যোগদান করা ডা. নাসির আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন সুবিধা নেন। তাছাড়া বিএনপি থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ বাগিয়ে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন ওই ডাক্তার।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার এটিএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। এ ঘটনায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানোর পর তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আইনি সহায়তা নিতে অনুমতি চাওয়ার পর থেকে চক্রটি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মাসুদ মৃধা বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়, টিএসসিসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রায়ই যাতায়াত করি। তবে ডা. নাসিরের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের কথা বা দেখা হয়নি।

এ সময় তিনি ডা. নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ডা. নাসিরকে বিএনপির আমলে আমি নিজে চাকরি দেই। কিন্ত ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ডা. নাসির বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা বনে যান। পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ারে আধিপত্য বিস্তার করে একা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে অপর অভিযুক্ত মো. সাইফুল মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে আমি দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছি। এ সময় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এ ধরনের অভিযোগ আসতে পারে। তবে আমার এ রকম কোনোকিছুতে সংশ্লিষ্টতা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান বলেন, এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বোর্ডকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সেটি স্থানীয় থানায় আইনি প্রক্রিয়ার জন্য পাঠানো হবে।

/আনিসুর/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়