ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

প্রশিক্ষক ছাড়াই চলছে কুবির ব্যায়ামাগার

এমদাদুল হক, কুবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
প্রশিক্ষক ছাড়াই চলছে কুবির ব্যায়ামাগার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটিমাত্র ব্যায়ামাগার। তবে সেখানে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। যা আছে, সেগুলোর আবার নেই কোনো যত্ন। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষক না থাকায় অযত্ন, অবহেলায় চলতে থাকা এ ব্যায়ামাগার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে তারা জানিয়েছেন, দ্রুত নির্দিষ্ট জায়গা বণ্টন, প্রশিক্ষক নিয়োগ ও উন্নত যন্ত্রপাতি ক্রয় করলে ব্যায়ামাগারটি নিয়ে আবারও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ফিরতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন একটি কক্ষে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যায়ামাগারটি চালু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। উদ্বোধনের পর রাতারাতি সেটা বেদখল হয়ে যায়। নামে ব্যায়ামাগার থাকলেও কক্ষটির চাবি থাকতো তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের কাছে। ফলে এটি একসময় পরিণত হয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয় তথা টর্চার সেলে। বিচারের নাম করে নানা সময় শিক্ষার্থীদের ধরে এনে এই ব্যায়ামাগারটিতে মারধর করতো তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ তাদের অনুসারীরা।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দোতলার কমনস্পেসে নিয়ে আসা হয় ব্যায়ামাগারটি। সেখানে উদ্বোধনের সময় ব্যায়ামাগারের জন্য ৪ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৪ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন যন্ত্র কেনা হয়। তবে এসব যন্ত্রাংশের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায়, তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তবে ব্যায়ামাগারটি কমনস্পেসে হওয়ায় এখানে মানুষের অবাধ যাতায়াত। ফলে ছাত্রীরা কখনো এটি ব্যবহার করতে পারেননি। আবার ক্যাফেটেরিয়ার দোতলায় ছাত্রীরা সাংগঠনিক কাজে গেলে বিব্রতকর অবস্থায় মধ্যে পড়তে হয় ব্যায়াম করতে থাকা ছাত্রদের।

এছাড়া বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ, সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা, প্রশিক্ষক না থাকা, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় ব্যায়ামাগারটি এখন শুধু নামেই।

ব্যায়ামাগারে নিয়মিত ব্যায়াম করতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন বলেন, আমি নিয়মিত জিমে যেতাম। কিন্তু এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। অনেক উপকরণই নষ্ট। আবার কোনো প্রশিক্ষক নেই, অনেকসময় জিম বন্ধ থাকে। আলাদা কোনো কক্ষ না থাকায় ব্যায়াম করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না বলে এখন আর যায় না।আমি চাই, দ্রুত জিমের দিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ হোসেন সানি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারের জিনিসপত্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। কোন যত্ন নেই। আমরা কয়েকজন বেশ কয়েকদিন গিয়েছিলাম। কিন্তু যখনই যাই, তখনি দেখি জিনিসপত্রগুলো একটা রুমে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে ফোন দিলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝামেলা চলে তাই বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝামেলার সঙ্গে ব্যায়ামাগার বন্ধের কি সম্পর্ক? এভাবে চলতে থাকলে আসলে ব্যায়ামাগারের উপর শুধু আগ্রহই কমবে।

এ নিয়ে শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রশাসন থেকে যে কক্ষ দিয়েছে, তা আমরা হারিয়েছি। তবে ক্যাফেটেরিয়ায় জিমের কার্যক্রম চলছে। অনেক উপকরণ নষ্ট। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। কক্ষটি ফেরত পাওয়ার ব্যাপারেও প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া জিমের প্রশিক্ষকের ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে কিছু করা সম্ভব না।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, এই বিশ্বিবদ্যালয়ে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল বা শিবিরের ব্যানারে কোনো কিছু দখলে থাকবে না। জিমনেশিয়ামের কক্ষ যে ছাত্রলীগের দখলে ছিল, এটা আমি আজ জানতে পারলাম। দ্রুত এটি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। জিমনেশিয়ামের যন্ত্রপাতি বাড়ানো বা নষ্ট যন্ত্রপাতি পুনরায় চালু করার ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো। কোনো যন্ত্রপাতি যাতে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলবো।

প্রশিক্ষক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। জিমনেশিয়ামের জন্য প্রশিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়