গণপিটুনিতে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর প্রতিবাদে জাবিতে বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শামীম মোল্লা হত্যায় জড়িতদের বিচারসহ তিন দফা দাবি করেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চ থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দিয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো— ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনতে হবে, ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে যে খুন হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্তের সাপেক্ষে আমরা এর বিচার দাবি করছি। সেই সঙ্গে এই খুনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে যুক্ত করা হচ্ছে। এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করার অপপ্রচেষ্টা।

তিনি বলেন, নবনিযুক্ত প্রশাসনের দুর্বলতা এ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। একইসঙ্গে মৃত্যু হয়েছে পুলিশি হেফাজতে। পুলিশ কেনো একজন সুস্থ মানুষকে হেফাজতে নিয়ে হত্যা করল, এর সঙ্গে বড় কোনো ষড়যন্ত্র যুক্ত কিনা- আমাদেরকে খতিয়ে দেখতে হবে। কাল রাতে ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কিছু অছাত্রকে কেনো প্রক্টর অফিসে ঢুকতে দেওয়া হলো, এর জবাবও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে।

শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আব্দুর রশীদ জিতু বলেন, গতকাল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। আমরা জানি, শামীম মোল্লার বিরুদ্ধে মাদক সিন্ডিকেটসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি বিশেষ মহল সব জায়গায় তাদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শামীম মোল্লাকে প্রক্টরিয়াল অফিসে আনার পর তালা ভেঙে দুবার তার উপর অত্যাচার করা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে গতকাল হত্যার ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় নবনিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, অবিলম্বে সারাদেশে মব-জাস্টিস বন্ধ এবং ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে এক মানববন্ধন করেন তারা।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শামীম মোল্লা গণিকে শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে আহত অবস্থায় পুলিশি হেফাজতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে রাত ১১ টায় মৃত্যুবরণ করেন।