ঢাকা     রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৭ ১৪৩১

ঢাবি শাখা শিবির সভাপতি পরিচয় দেওয়া সাদিক কাইয়ুম কে?

সাদ আদনান রনি, ঢাবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
ঢাবি শাখা শিবির সভাপতি পরিচয় দেওয়া সাদিক কাইয়ুম কে?

জুলাইয়ে ছাত্র -জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পরিচিত মুখ ছিলেন সাদিক কাইয়ুম। সমন্বয়ক বা লিয়াজোঁ কমিটির নামের তালিকাতে ছিলেন না। তবে জুলাই মাসে চলা ছাত্র আন্দোলনে সরব ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিক কায়েম।

তালিকায় নাম থাকা সমন্বয়কদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতেও তাকে দেখা গেছে। আলোচনা আছে, উপদেষ্টা পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

এবার নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ্যে এনেছেন আলোচিত সাদিক। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা বসিয়েছেন আলোচনা-সমালোচনার আসর। নানাজন নানামত দিচ্ছেন অবাক হয়ে।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) একটি স্ট্যাটাসে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান লিখেছেন, ‘ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে, পরিচয় জুলাইয়ের ২৫ তারিখ থেকে, তারপর নিয়মিতই কথা হতো।’

হঠাৎ সালমানের শিবির পরিচয়ে অবাকও হয়ে তিনি লেখেন, ‘সালমানের প্রকৃত নাম শাদিক কাঁইয়ূম এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি। অবশ্যই অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি।’

অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পেইজে সাকিককে নিয়ে  লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনীতি মুক্ত করার চক্রান্তের মুখে সাদিক কাইউম খুবই সঠিক পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড নিয়েছে। ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতি প্রকাশ্যে শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকরণের পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে। ছাত্র রাজনীতিকে ভিলেইন বানানোর সুশীল চক্রান্ত আমাদেরকেই রুখে দিতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশের ছাত্ররা একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিরোধের শক্তি। এই শক্তিকে নির্বীর্য করে দেওয়ার চেষ্টা অনেক দিন থেকে চলছে। সকল ছাত্র সংগঠন তাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিকে সচল করুক।’ এরপর তিনি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৭ বছর পর সাদিক কাইয়ুমের মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াত ইসলামের আলোচিত এই ছাত্র সংগঠনের প্রকাশ্যে আসার ঘোষণার পরে ক্যাম্পাস জুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। সদ্য ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কৌতূহল।
 
জানা গেছে, সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন ঢাবির মাস্টারদা সূর্য সেন হলে। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি শহরের বাজার এলাকায়। তার বাবা জেলা শহরের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তার ছোট ভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।

সাদিক খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদরাসা থেকে দাখিল এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। এত কিছুর পরে প্রশ্ন ওঠে- হলে থাকা অবস্থায় কেমন ছিলেন সাদিক কাইয়ুম?

ঢাবির মাস্টারদা সূর্য হলের সাদিক কাইয়ুমের বন্ধু এবং রুমমেট ঢাবির ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা মশিউর রহমান তার ফেসবুক পোস্টে সাদিক কাইয়ুম সম্পর্কে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কাইয়ুম আমার রুমমেট, বেডমেট এবং আমার বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ২ টা বছর আমরা একসাথে একই রুমে কাটিয়েছি। আমার দেখা সবচাইতে ভালো একটি ছেলে! মেধাবী, পড়ুয়া এবং ধর্মভীরু একটা ছেলে!’

তিনি আরও লেখেন, ‘জামায়াত শিবির করা কতোটা কঠিন শুধু সেটাই বলি, ২ বছর গণরুমে, পরবর্তীতে সিঙ্গেল রুমে একসাথে কাটালেও ও যে শিবির করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি, সেটা আমি জানতে পারি ৫ আগস্টের পরে! ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর টর্চারের মধ্যে যখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার টেবিলে বসাই কঠিন, ঠিক তখন সাদিক পলিটিকাল সায়েন্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়! জাস্ট চিন্তা করুন, একই রুমে ২ বছর থাকলেও ওর রাজনৈতিক আদর্শ আমি জানতে পারি নাই। যাই হোক, অসাধারণ মেধাবী এবং ভালো একটা ছেলে সাদিক!’

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়