ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ৩০ ১৪৩১

নবীনদের উদ্দেশ্যে রাবি ছাত্র উপদেষ্টার খোলা চিঠি

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৩:২৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নবীনদের উদ্দেশ্যে রাবি ছাত্র উপদেষ্টার খোলা চিঠি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আগমন করেছেন ২০২৩-২০২৪ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন বিভাগে তাদের নিয়ে অরিন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়।

এ নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিয়েছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কনক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক বলে জানা গেছে।

রোববার ড. কনক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি দীর্ঘ লেখা পোস্ট করেন। সেখানে স্বাগত জানিয়ে রাবির ৭১তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আমার প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, একজন গর্বিত নতুন সদস্যের অধিকার নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্তরে তোমাদের আগমনকে প্রথমেই স্বাগত জানাই। সাধারণতঃ বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তোমাদের পদার্পণ হচ্ছে অনেক মানুষের মাঝে এক হয়ে ওঠার সংমিশ্রণ। অনেক রকম মানসিকতার, অপরিচিত থেকে আপন হয়ে ওঠার, মেলা-মেশার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সারা জীবনের অভিজ্ঞতা পুঞ্জীভূত হয়েই তোমাদের ভবিষ্যত জীবন নির্মিত হয়ে উঠবে এখান থেকেই। জীবনে ঘটে যাওয়া অতি পরিচিত ঘটনাপুঞ্জই পরিবর্তিতরূপে উপন্যাসের মতো রূপায়িত হয়ে তোমাদের জীবনকে পথ নির্মাণ করে দিতে পারে, তা দেখে তোমরা নিজেরাই বিস্মিত হয়ে যাবে হয়তো।’

অহংকার থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে বিদ্যার দ্যুতি ছড়াক। কিন্তু কাউকে হীন বিবেচনার তিলমাত্র অহংকার যেন স্পর্শ না করে। মননে, সৃজনশীলতায় তোমরা অবাক হয়ে দেখবে; তোমাদেরই মুখের কথা কী করে জীবন বদলের সংলাপ হয়ে যাচ্ছে, কোনো এক বন্ধু বা সফল মানুষের আদলে কী করে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ব্যক্তিসত্তা হয়ে উঠেছো তুমি।’

অতীতকে অস্বীকার না করার আহ্বান জানিয়ে ড. কনক বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসই তোমাকে দিতে পারে আধুনিক মানসিক জগতের নির্মাণ-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা। কিংবা হতাশার জটাজালে ভরা এক আশাহত জীবন। আজ হয়তো কেউই তোমরা একে অপরের মনস্তাত্ত্বিক ও চরিত্রগত দিক বা জীবনবৃত্তের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নও। কিন্তু একটা সময় অসংখ্য সাদা কাগজের পৃষ্ঠার মতো তোমাদের এই কোমল মনও ভরে উঠবে নানা বিষয়ে ঠাসা অভিজ্ঞতায়। অথচ তোমরা নিজেরাও সে-সব অন্তর্জগৎ সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতে পারবে না হয়তো। তোমরা তোমাদের অতীত অস্তিত্বকে অস্বীকার করে নয়, ইতিবাচক ও সুন্দরকে স্বীকরণ করেই এই লক্ষের দিকে অগ্রসর হবে বলেই আমি আশাবাদী।’

‘খুব সঙ্গত কারণেই তোমরা আমাদের দেশের জনগণের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো নিজ নিজ জীবনে দেখাবার চেষ্টা করবে বলেই আমি আরও আশাবাদী। প্রত্যেকেই পরস্পরের  জাতি, ধর্ম, ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখাবে। তোমরা চেষ্টা করবে ইতিবাচক কর্ম, চিন্তাধারা এবং আবেগের দিকগুলো তুলে ধরতে, যা ২০২৪ এর বিপ্লব পরবর্তী একেবারে নতুন এবং মানবিক বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার আগে যার অস্তিত্ব অসম্ভব ছিল। আমার চাওয়া, একাত্তরের সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বপ্নভঙ্গ ও বর্তমান সংকট-ষড়যন্ত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ নির্মাণের ভবিষ্যৎ কর্ম সম্পন্ন হবে তোমাদের মতো প্রাণবন্ত মানুষের দ্বারা। কারণ, তোমাদের অকৃত্রিম চিন্তা-চেতনা, হৃদয়াবেগ অন্যান্য ভাবনা এবং মনোভাবের পাশাপাশি অবস্থান করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যত।’- যুক্ত করেন ছাত্র উপদেষ্টা।

নিজের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যা কিছু ঘটে চলেছে তার কোনোটা রয়েছে প্রথাগতভাবে, কোনোটা বা পুরাতনকালের গর্ভ থেকে উদ্ভুত ধ্যান-ধারণা থেকে। তোমাদের সমকালীন ও ভাবীকালের প্রজন্মই নতুন বাংলাদেশের আদর্শ-মানুষের দৃষ্টান্ত হবে বলে আমি স্বপ্ন দেখি। অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়েও তোমরা নজিরবিহীন কর্ম সমাপন করতে সক্ষমতা অর্জন করবে বলে আমি আারও আশাবাদী। প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব কিছু ত্রুটি এবং দুর্বলতা থাকাটা স্বাভাবিক, প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব ধরন-ধারণে জীবনযাপনে, প্রেমে, ঈর্ষায় পীড়িত হতে পারে; প্রত্যেকেই আশা-নিরাশায়, আনন্দে-দুঃখে পরিপূর্ণ থাকতে পারে। একজন মানুষের চরিত্রের কেবল একপার্শ্বীয় দিক থাকে না, জীবনে মানুষকে ছোটো করতে পারে তেমন দিকগুলো বাদ দিয়ে কখনো জীবনের ঘট পূর্ণ হয় না। কিন্তু সকল দীনতা, ক্ষুদ্রতা, নীচতা দু'পায়ে দলে তোমরা এগিয়ে যেতে সক্ষতা অর্জন করবে বলেই আমি আশায় বুকবাঁধি। তোমাদের অদম্য উৎসাহ উদ্দীপনা আর শ্রমের উজ্জ্বল অবদানের কথা বলবে এ দেশের মানুষ, এমন প্রজন্মই আমার আকাঙ্ক্ষা। যে কোনো মূল্যে বিনয়ী, অধ্যবসায়ী, জ্ঞানপিপাসী, সত্যান্বেষী ও সাহসী ব্যক্তিত্ব গঠন করে বিশ্বশক্তির মাঝে দেশের হয়ে প্রভাব বিস্তার করতেই হবে তোমাদের।’

কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিজের উপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব এ শিক্ষক বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অসংখ্য সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত ও গর্বিত সন্তান সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি করেছে এমন অনেক উজ্জ্বল দীপ্ত নর-নারী; যারা নতুন সমাজের জন্য সংগ্রাম করেছে, সাহায্য করেছে গড়ে তুলতে নতুন বাংলাদেশ। আমাদের প্রজন্মের চরিত্রদের অন্তর্জগৎ একটা সীমিত গণ্ডীর মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। আমরা চাই সেই গণ্ডি ভেঙে দিয়ে তোমরা শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক অংশীদারত্বে, কো কারিকুলাম এক্টিভিটিজে মুখর করে তুলবে রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয় ক্যাম্পাসকে। জয় হোক শিক্ষার্থী-শিক্ষক-জনতার। তোমাদের জন্য ভালোবাসা।’

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাবি প্রশাসনে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। একে একে শূন্য হয়ে যায় উপচার্য, উপ-উপাচর্যসহ সবগুলো প্রশাসনিক পদ। পরবর্তীতে অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম কনককে।

ড. আমিরুল ইসলাম কনক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১৩ সালে ওই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর সহকারী অধ্যাপক এবং ২০২০ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। মো. আমিরুল ইসলাম কনক মুক্তিযু‌দ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগ‌তিশীল শিক্ষক সমা‌জে‌র সদস্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সর্বদা শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়