ঢাকা     বুধবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১০ ১৪৩১

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু নিয়ে যা বলছেন জাবি উপাচার্য ও প্রক্টর

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু নিয়ে যা বলছেন জাবি উপাচার্য ও প্রক্টর

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষারোপ করে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। এসময় শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন উপাচার্য। একইসঙ্গে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলমও প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য দেন।

উপাাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘একাধিক গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপস্থিতিতে শামীম মোল্লাকে মারধর করা হয়েছে। অথচ আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য প্রক্টরকে নির্দেশ দেই। এছাড়া ঘটনার গুরুত্ব উপলদ্ধি করে নিজেই রাত ৭ টা ২০মিনিটের দিকে প্রক্টর অফিসে উপস্থিত হই। আমি গিয়ে দেখতে পাই, পুলিশ তখনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে আবারও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দ্রুত আসার জন্য অনুরোধ করি।’

উপাচার্য বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে জানতে পারি, শামীম মোল্লাকে মারধরকারী বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নিরাপত্তা শাখার কলাপসিবল গেইটে নতুন তালা লাগিয়ে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। আমি কালবিলম্ব না করে তাকে দ্রুত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার জন্য প্রক্টরকে নির্দেশ দিই। এরপর আমি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি। আমার উপস্থিতিতে মারধরের বিষয়টি সত্য নয়।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে প্রক্টর অফিসে উপস্থিত সাবেক শিক্ষার্থী ও জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভূঁইয়া এবং আমাকে জড়িয়ে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সেদিন প্রক্টর অফিসে গেলে নবনিযুক্ত উপাচার্য হিসেবে আমার সঙ্গে অনেক সাবেক শিক্ষার্থী দেখা করেন। তাদের মধ্যে আবু সাঈদ ভূঁইয়াও ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছি। তাদের সঙ্গে শামীম মোল্লাকে মারধরের বিষয় নিয়ে আমার কোনো কথা হয়নি।’

কিছু গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে কামরুল আহসান বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক সংবাদে শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি এ ঘটনায় একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণেদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে কয়েকজনকে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি ওইদিনই প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় এত তড়িৎ গতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষারোপ করার বিষয়টি দূরভিসন্ধিমূলক।’

এদিকে নিজেদের অবস্থান ও পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রক্টরিয়াল বডিকে জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে প্রক্টরিয়াল বডির গাফিলতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত এগুলো সত্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘সেদিন উপাচার্যের নির্দেশের পরপরই আশুলিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করা হয় এবং শামীম মোল্লাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য দ্রুত পুলিশের টিম পাঠানোর জন্য অনুরোধ করি। নিরাপত্তার স্বার্থে শামীম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কলাপসিবল গেইটে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর আমি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কলাপসিবল গেইটের সামনে নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারায় রেখে নিজের অফিসে ফিরে আসি। এরমধ্যে কতিপয় বিক্ষুদ্ধ ব্যক্তি গেইটের তালা ভেঙ্গে শামীম মোল্লাকে মারধর শুরু করেন বলে খবর আসে। তৎক্ষণাৎ আমি নিরাপত্তা শাখায় গিয়ে বিক্ষুদ্ধদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াই এবং সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেই। এরপর শামীম মোল্লার নিরাপত্তার স্বার্থে আবারও নিরাপত্তা শাখার কলাপসিবল গেইটে নতুন তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।’

শামীম মোল্লাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে প্রক্টর বলেন, ‘রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার সময় পুলিশের টিম প্রক্টর অফিসে আসে। এরপর রাত আনুমানিক আটটার দিকে আমি এবং নিরাপত্তাকর্মীরা শামীম মোল্লাকে ঢালস্বরূপ নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে দিই।’

থানায় মামলা দায়েরের বিষয়ে প্রক্টর বলেন, ‘এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতে মামলা করা হয়েছে। তবে মামলার এজহারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রেরিত অভিযুক্তদের ক্রমের সঙ্গে আসামীদের ক্রমের অমিল পরিলক্ষিত হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে মামলায় আসামীদের ক্রম সংশোধন করা হয়েছে।’

আসামীদের ক্রম পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলার বাদী হন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশিত নিয়মেই তাকে মামলা করতে হবে। ক্রম পরিবর্তনের সঙ্গে মামলার বাদী প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জড়িত আছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপাচার্য ও আমাকে জড়িয়ে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। একটি তদন্তাধীন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে তার এরূপ মন্তব্যের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

/আহসান/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়