ঢাকা     শনিবার   ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যা বললেন ক্যামব্রিজ অধ্যাপক এলেক্স

পাবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যা বললেন ক্যামব্রিজ অধ্যাপক এলেক্স

বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এলেক্স ওয়েব এর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবিপ্রবির নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আবদুল আওয়াল। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে দুই অধ্যাপকের মধ্যে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় উপাচার্য নিজ কার্যালয়ে মতবিনিময় সভার আলোচ্য বিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

উপাচার্য বলেন, আমি অনেকগুলো বিষয় নিয়ে ক্যামব্রিজ অধ্যাপক এলেক্স ওয়েবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছি এবং তিনি বিস্তারিত উত্তর দিয়েছে।’ 

পাবিপ্রবিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পেতে পারে সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘বিশ্বের যে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলোতে খুব মেধাবী শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনার সুযোগ পান। খুব মেধাবী এবং এক্সট্রা অর্ডিনারি শিক্ষার্থী না হলে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পাওয়া কঠিন। এ জায়গাগুলোতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের হার খুবই কম। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির প্রক্রিয়া থেকে আলাদা। এখানে একজন শিক্ষার্থীর অনেক কিছু যাচাই বাছাই করে তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে যারা বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আসতে চায়, তারা যেন বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় সেটা চীনের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে, যুক্তরাজ্য্যের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে কিংবা বিশ্বের শীর্ষ যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে তারা যেন তাদের স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করে নেয়। এরপর তারা বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএচডির জন্য আবেদন করলে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সহজ হবে।’

যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যদি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে সমঝোতা করতে চায় তাহলে করণীয় কি হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার বিষয়ে সমঝোতা করতে চায়লে সংশ্লিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপ-উপাচার্যের (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতের সঙ্গে কীভাবে সমঝোতা করতে হবে, তার বিস্তারিত গাইডলাইন জানিয়ে দিবে। এরপর গাইডলাইন অনুযায়ী আপনারা ওদের সঙ্গে সমযোতা করবেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে পারলে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীপ পাওয়া এবং গবেষণার সুযোগ পাওয়ার কাজটা সহজ হয়ে যাবে।’

যুক্তরাজ্য কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার জন্য ফান্ডিং পাওয়ার বিষয়ে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘আপনাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকার থেকে গবেষণার জন্য খুব অল্প টাকা পায়। সে ক্ষেত্রে বাইরের দেশ থেকে আপনাদের ফান্ডিং নিয়ে আসতে হবে। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে গবেষণার জন্য অনেক টাকা পেত। কিন্তু বেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য টাকা কমিয়ে দেয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু দেশ। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করে। সে জন্য আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও সরকার যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সঠিক পন্থায় যোগাযোগ করতে পারে, তাহলে আপনারাও ফান্ড পাবেন। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে বিবিআরসি নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ফান্ড দেয়। ব্রাজিল এবং ভারত এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা করে গবেষণার জন্য অনেক ফান্ড পাচ্ছে। তাই আপনারাও এদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এদের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আপনার দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় এদের থেকে ফান্ড পেতে পারে।’

বাংলাদেশকে গবেষণাখাতে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই প্রশ্নের জবাবে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘আমি চিলির বিপ্লবের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিপ্লবের একটা মিল খুঁজে পেয়েছি। চিলি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গবেষণায় এগিয়ে গেছে। সে জন্য চিলি কীভাবে শিক্ষা ও গবেষণায় দ্রুত এগিয়ে গেছে, তা আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন এবং ওদের ভালো দিকগুলো নিয়ে কাজ করলে আপনারাও গবেষণায় খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করি।’  

পাবিপ্রবি উপাচার্য সব শেষে বলেন, ‘এই বিষয়গুলোর বাইরেও এলেক্স ওয়েব অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সে আমাদের নতুন বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে নতুন বাংলাদেশে ভালো কিছু হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।’

/আতিক/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়