ঢাকা     রোববার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৪ ১৪৩১

গণঅভ্যুত্থানে বিরোধিতার অভিযোগ, তোপের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়লেন ইবি শিক্ষক

ইবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২২:৪৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গণঅভ্যুত্থানে বিরোধিতার অভিযোগ, তোপের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়লেন ইবি শিক্ষক

জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িতদের সমর্থন ও ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলকে ক্যাম্পাসছাড়া করেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তিনি ক্যাম্পাসে আসলে শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে একপর্যায়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন বাকী বিল্লাহ বিকুল। 

শনিবার সকাল ১০টার বাসে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি তার বিভাগে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিভাগের সভাপতিসহ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে বাকী বিল্লাহ বিকুলকে ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বলেন। বিভাগের সভাপতিসহ কয়েকজন শিক্ষক তাকে নিরাপদে ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে সাহায্য করেন। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনকে ‘নৈরাজ্য’ অভিহিত করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মিছিলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই মিছিল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, প্রতিশোধ ও চূড়ান্ত লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন ছাত্র উপদেষ্টা পদে থাকা এই অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হলে তাদের মুক্ত করতে ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা নেননি বাকী বিল্লাহ বিকুল। তাকে ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি। আন্দোলনের শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে লেখালেখি করতেন বাকী বিল্লাহ বিকুল। 

শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কয়েকজন শিক্ষক মিছিলে অংশ নিলে তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও প্ররোচনা দেন বাকী বিল্লাহ বিকুল। সংহতি জানানো শিক্ষকদের তালিকা করে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানোর কাজেও জড়িত ছিলেন তিনি। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অনেককে হুমকি দেন এবং মাঝপথে কিছু শিক্ষার্থীকে একত্রিত করে আন্দোলন স্থগিতের নাটক মঞ্চায়নে ভূমিকা পালন করেন বাকী বিল্লাহ বিকুল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে যারা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদের সমর্থন করেছেন বাকী বিল্লাহ বিকুল। বার বার তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। আমরা এমন কোনো শিক্ষককে ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না, যিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। যেখানে শত শত ছাত্রকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে যেসব শিক্ষক সমর্থন দিয়েছেন, তাদের আমরা কোনোভাবেই শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করতে পারছি না।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেছেন, আমি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাওয়ার দাবি জানায়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি বের থেকে হয়ে যাই। এ সময় তারা আমার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। তাদের সাথে আমি নিজেও কথা বলেছি। তবে, আমার প্রশ্ন— ক্যাম্পাসে এত আওয়ামীপন্থি শিক্ষক আছেন, শুধু আমার সাথে বার বার এমন কেন করা হচ্ছে?

তিনি আরো বলেন, আমি ছাত্র উপদেষ্টা থাকাকালীন কখনো কোনো ছাত্রের ক্ষতি করিনি। সব সময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীরা হয়ত ভুলের মধ্যে আছে। আমি আশা করি, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে। আমি সব সময় শিক্ষার্থীদের স্নেহের চোখে দেখি, তাদের ওপর আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, এখনো থাকব। 

ইদুল/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়