ঢাকা     রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২১ ১৪৩১

শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়নের সুযোগ চান ইবি শিক্ষার্থীরা

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ৬ অক্টোবর ২০২৪  
শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়নের সুযোগ চান ইবি শিক্ষার্থীরা

কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস না নেওয়া, জ্ঞানভিত্তিক লেকচার না দেওয়া, কোর্স শেষ না করা, নির্দিষ্ট সময়ে পরিক্ষা না নেওয়া, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব করাসহ নানা অভিযোগ করে আসছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের এমন দায়িত্বহীনতার কারণে বিভাগগুলোতে তীব্র সেশনজটসহ বিভিন্ন একাডেমিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এ সব সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, পাঠদান মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হলে জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হবে। এতে সমস্যাগুলো সহজে সমাধান হবে। এদিকে শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়নের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরাও। 

জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন,  আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ, বাংলা ও জিওগ্রাফি অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্ট বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিকার্থীরা বিভাগের সমস্যা নিরসন ও সংস্কার দাবিতে শিক্ষকদের নিকট বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়নের পদ্ধতি চালুকরণ ছিল অন্যতম। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কিছু শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নেন না, নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স শেষ করেন না, জ্ঞানভিত্তিক লেকচার দেন না, কোর্সের বিষয়বস্তু কেমন তা শিক্ষার্থীদের মাঝে স্পষ্ট করেন না, ক্লাসের পরিবেশ আকর্ষণীয় এবং প্রাণবন্ত করতে পারছেন না, শ্রেণিকক্ষে আরামদায়ক অ্যাকাডেমিক পরিবেশ তৈরি করতে পারছেন না, কোর্স ম্যাটারিয়ালস সরবরাহ করছেন না এবং পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্ট ঠিকমতো নেন না। এ সব বিষয় সমাধানে শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এজন্য অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর দাবি জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তাহমিদ বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে বিবেচিত হলেও দুঃখের বিষয় এই যে, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের চিত্র কিছুটা ভয়াবহ। এর অন্যতম একটি কারণ পাঠদান, কিংবা শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা। অধিকাংশ শিক্ষক আন্তরিক হলেও দায়িত্বহীনদের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাওয়ার পর সঠিক শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে হতাশার কোলে ঢলে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যা সমাধানের একটি পথ হতে পারে, পাঠ মূল্যায়ন পদ্ধতি। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মানদণ্ডে শিক্ষকদের পারফরম্যান্সের ওপর নম্বর দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়ন পদ্ধতি অত্যন্ত ইতিবাচক ও যৌক্তিক। এতে শিক্ষকদের একটি জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হবে। একটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে শুধু শিক্ষার্থীরা লাভবান হবে তা নয়, পাঠদান মূল্যায়নের মাধ্যমের শিক্ষকের মধ্যেও দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে। শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়নের পদ্ধতিটি খুব দ্রুত চালু হওয়া উচিত। 

পাঠদান মূল্যায়নের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু রয়েছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ও শিক্ষাবান্ধব হবে। ছাত্র শিক্ষকের মাঝে একটি জবাবদিহিতার সম্পর্ক তৈরি হবে। অনেক শিক্ষককে তার আসল উদ্দেশ্য ভুলে যেতে দেখা যায়। তিনি যে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য শিক্ষকতা করছেন, এটি ভুলে অন্যান্য কাজে মনোযোগ দেন। পাঠদান মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের মধ্যে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এটি চালু করা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর এমন কাজ করতে আমি সব সময় সচেষ্ট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বহির্বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ্ধতি চালু আছে। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের পাঠদানের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পাই। শিক্ষকদেরও একটি জবাবদিহির জায়গা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করছি খুব দ্রুত এটি নিয়ে কাজ করা হবে। 

তবে এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

/ইদুল/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়