ঢাকা     রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২১ ১৪৩১

প্রাণ ফিরেছে চবিতে

মিজানুর রহমান, চবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ৬ অক্টোবর ২০২৪  
প্রাণ ফিরেছে চবিতে

বৈষম্য আর পরাধীনতার বিরুদ্ধে সব সময় এ দেশের ছাত্র-জনতার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ মাতৃকার সব দুর্দশায় তারা এগিয়ে এসেছে নিরন্তর। সেটা আবার প্রমাণ হলো ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে।

জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে শিক্ষকদের পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়। এতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর কিছুদিন পরেই শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে মেনে না নিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, যা একসময় সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।

দুর্বার আন্দোলন দমাতে পতিত স্বৈরাচার সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের বের হতে নির্দেশ দেয়। পুলিশ ও আওয়ামী-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আহত ও নিহত করে। এতকিছুর পরেও শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন অব্যর্থ প্রমাণিত হয়। অবশেষে ৫ আগস্ট কুখ্যাত স্বৈরাচার সরকার দেশত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়।

জুলাইয়ের শুরু থেকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সম্পূর্ণ অচলাবস্থায় ছিল দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাঙ্গন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। পদত্যাগ করেছে গত সরকারের আমলের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সব প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি। তবে দীর্ঘ বন্ধের ইতি টেনে অবশেষে রোববার (৬ অক্টোবর) সকল কার্যক্রম শুরু করছে চবি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে প্রায় আট বছর পর আবাসিক হলগুলোতে বৈধভাবে আসন বরাদ্দ দিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের  নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী ক্লাসও হয়েছে আজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছে। দীর্ঘদিন প্রাণহীন থাকা চবি যেন এবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর উন্মুক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে আজ যেন উচ্ছ্বাস আর আবেগের ঢেউ উঠেছে। সবার মাঝে দেখা গেছে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার ভাব। ভয়হীনভাবে পুরো ক্যাম্পাসে উল্লাসিত শিক্ষার্থীরা। আগে যেখানে ছিল মাদকের গন্ধ, অস্ত্রের ঝনঝনানি, মানুষরূপী হায়নাদের সর্বগ্রাসী আঁচড়, সেখানে আজ শিক্ষার্থীরা যেন মুক্ত বিহঙ্গ! তারা ফের খুঁজে পেয়েছে একাত্তরের ফলাফল।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা উল্লাসিতভাবে হাঁটাহাঁটি করছেন, কেউ কেউ চব্বিশের স্বাধীনতার স্মৃতিচারণ করছেন, কেউবা শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন। 

হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় চবির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদের সঙ্গে। জানান দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস খুলার অনুভূতি, সঙ্গে প্রত্যাশা করেন অনেককিছু। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর সশরীরে ক্লাস করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। সেই সঙ্গে এখন স্বাধীনতা পেয়েছি। নিজের মতো করে চলতে-বলতে পারছি, কেউ বাধা দিচ্ছে না। নতুন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বছরের পর বছর ধরে চালু থাকা ভুল সিস্টেমগুলো রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একটু সময় লাগবে। নতুন প্রশাসনের কাছে আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি।

চবির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবতাহী নাহিন জানান, ক্যাম্পাসে এতো দ্রুত এমন স্বাধীন একটা পরিবেশ পাবো, কল্পনাও করিনি। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশে স্বাধীনভাবে চলতে পারছি। আশা করছি, দূর ভবিষ্যতেও স্বাধীনতার এ প্রসন্ন ধারা আর কোনো স্বৈরাচারীর কবলে পড়ে বিকিয়ে যাবে না। সামনে যেন আর কোন স্বৈরাচারী সরকার ও সিস্টেম চালু না হয় সেদিকে আমাদের সজাগদৃষ্টি রাখতে হবে।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়