ঢাকা     বুধবার   ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ০ ১৪৩১

নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

নোবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১২, ১৬ অক্টোবর ২০২৪  
নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কার্যক্রম চলমান থাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের রাজনীতি চাই না। জুলাই বিপ্লবের নয় দফা দাবির এক দফা ছিল ক্যাম্পাসে সব ধরনের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ভার্সিটির রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক ক্যাম্পাসে সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করাও হয়েছে। রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া পরও নোবিপ্রবির নামকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আইনকে লঙ্ঘন করা। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

নিজেদের দলীয় কার্যক্রম প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল বলছে, রাজনীতি করা প্রত্যেক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। সেই জায়গা থেকে আমরা রাজনীতি করে যাব। সাধারণ ছাত্ররা যেন নির্যাতিত না হয় এবং তাদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছাত্রদল কাজ করে যাবে। ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারায় ছাত্র রাজনীতির বৈধতা দেওয়ার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাবো।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এবং ব্যানার ব্যবহার করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে ‘নোবিপ্রবি ছাত্রদল’ ও ‘নোবিপ্রবি ছাত্রদল অফিসিয়াল’ এ দুটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়।
 
ছাত্রদলের পেজ থেকে করা পোস্টে দেখা যায়, গত ৭ অক্টোবর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতনে নিহত শহিদ আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালী শহর মাইজদী এবং ক্যাম্পাসের বাহিরে নোবিপ্রবি ছাত্রদলের ব্যানারে মিছিল ও স্মরণ সভা করে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আড্ডা এবং শোডাউনের পোস্ট দিতেও দেখা যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোবিপ্রবির সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল রীতিমতো ক্যাম্পাসে শোডাউন দিচ্ছে। মাইজদী শহিদ মিনারের সামনে আর ভার্সিটির গেটের বাহিরে ব্যানার নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে আর শহিদ মিনারের সামনে ছবি তুলছে। একজন তো স্ট্যাটাসই দিল ‘ক্যাম্পাসের নিয়মিত আড্ডায়’। একটা ছবিতে দেখলাম রীতিমতো হলের গেস্ট রুমে বসে আছে। তাহলে আপনারা রাজনীতির আর কি বাকি রাখলেন? 

যারা রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও নোবিপ্রবির নামকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিটি চালানো, এটা বিশ্ববিদ্যালয় চলমান আইনের লঙ্ঘন। নোটিশে উল্লেখ ছিল, যারা এ আইনকে লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। এবার দেখার পালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কথা ও কাজে কতটা বদ্ধপরিকর। 

হুমাইরা তাসনীম নেহা নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, রাজনীতি সবার ব্যাক্তিগত অধিকার, কিন্তু ক্যাম্পাসে না। রাজনীতি করলে ক্যাম্পাসের ১০১ একরের বাহিরে করবে। কোনো পোস্টার ব্যানারে নোবিপ্রবির নামে রাজনীতি করা যাবে না। ১০১ একরের বাহিরে যা ইচ্ছা তারা করুক, কোনো মাথা ব্যাথা নেই আমাদের। দরকার হলে লিখুক ‘বাংলাদেশ ছাত্রদল, সেলিম মামার টং দোকান শাখা’। কিন্তু নোবিপ্রবির ব্যানারে কোনো রাজনীতি চলবে না। 

এমন সব সমালোচনার মুখে নোবিপ্রবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শাহারাজ উদ্দিন জিহান বলেন, আওয়ামীলীগের দোসরদের দ্বারা গঠিত রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে হওয়া প্রজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে, এটা কার সঙ্গে আলোচনা করে করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাবো, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারায় ছাত্র রাজনীতির বৈধতা দিতে হবে।

ছাত্রদলের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এ নেতা বলেন, আমরা কাজ করে যাব। তবে এমন কোনো কাজ করবো না, যেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা আদর্শিক রাজনীতি করবো, কাউকে শক্তি প্রয়োগ করা হবে না। আমাদের আদর্শ পছন্দ হলে আসবে, না হলে নাই। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নূর হোসেন বাবু বলেন, রাজনীতি করা প্রত্যেক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। সে জায়গা থেকে আমরা রাজনীতি করে যাব। সাধারণ ছাত্ররা যেন নির্যাতিত না হয় এবং তাদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছাত্রদল কাজ করে যাবে। আমরা চাই নোবিপ্রবি বিগত সময়ে আওয়ামী শাসনামলে তৈরি হওয়া রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল করবে। 

রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এএফএম আরিফুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এবং ব্যানার ব্যবহার করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনীতি চালুর করার বিষয়েও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো রাজনৈতিক বডির সঙ্গে বসবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি দাবি নিয়ে আসে, তখন সেটা আমরা বিবেচনা করবো।

/ফাহিম/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়