ঢাকা     সোমবার   ২১ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৫ ১৪৩১

পর্যটন খাতভুক্ত চাকরিতে পর্যটন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার প্রয়োজন

মো. সোহান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২০ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৬:১৪, ২০ অক্টোবর ২০২৪
পর্যটন খাতভুক্ত চাকরিতে পর্যটন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার প্রয়োজন

ট্যুরিজম বা পর্যটন বলতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষের ভ্রমণকে বোঝায়, যা সাধারণত বিনোদন, অবকাশ যাপন, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (ইউএনডব্লিউটিও) অনুযায়ী পর্যটন বলতে বোঝায় এমন সব কর্মকাণ্ড, যেখানে একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে ভ্রমণ করেন এবং সেখানে একটানা ১ বছরের কম সময় অবস্থান করেন। এ ভ্রমণের উদ্দেশ্য হতে পারে অবকাশ, ব্যবসা বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য। তবে এটি সেই ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য নয় যারা সেই স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস বা আয়ের জন্য কাজ করতে যান।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন হাজার হাজার পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এ সব পর্যটন কেন্দ্র থেকে উপার্জন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে সব থেকে উন্নয়নশীল ও সম্ভাবনাময় খাত। যেখানে দেশের অর্থনীতিতে অবদান প্রায় ৩-৪%। বাংলাদেশের কক্সবাজার, বান্দরবান, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, সিলেটের চা-বাগানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যা পর্যটন খাতের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং আগামীতে করবে বলে আমরা আশাবাদী।

বর্তমানে বিভিন্ন উৎসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩০০-৩৫০ এর মতো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যা সরকারিভাবে স্বীকৃত এবং জনপ্রিয়। যেখান থেকে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান ও রাখতে অর্থনীতিতে অবদান।

পৃথিবীর বিখ্যাত দেশগুলো পর্যটনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে শুধু সঠিক পরিকল্পনা ও পর্যটন খাতের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে। একটু খেয়াল করলে দেখতে পাব, ফ্রান্স বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যটক প্রিয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। তাদের অর্থনীতির প্রায় ১০ শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে। আবার স্পেনের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। এটি ইউরোপের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এক‌ইভাবে ইতালির অর্থনীতির প্রায় ১৩ শতাংশ, থাইল্যান্ডের অর্থনীতির প্রায় ২২ শতাংশ, মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। 

দেশে মোট ১৫০টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ৩০টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যটন বিষয়ক চার বছরের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু আছে। প্রতি বছর সেখান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাস করে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে চাকরির জন্য বারবার আবেদন করেও কাঙ্ক্ষিত জব পাচ্ছেন না। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত আলোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে পর্যটন বিষয়ক অনেক চাকরি রয়েছে। কিন্তু সেখানে সবাই চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই যে ৩০টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করলেন, তাদের আলাদা করে মূল্যায়নের সুযোগ কোথায়? তারা প্রায় পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে পর্যটন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করলেন, এটা কোথায় কাজে লাগাবে?

আমরা জানি,  বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মধ্যে সব থেকে ভালো ধরা হয় বিসিএস ক্যাডারকে। এখানে সব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিয়ে মেধার মাধ্যমে নিজের চাকরি অর্জন করে নিতে পারেন। কিন্তু আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো, এ বিসিএস ক্যাডার পদে পর্যটন বিষয়ক নানা পদ রয়েছে । কিন্তু যারা পর্যটন বিষয়ে অভিজ্ঞ না, তারা বিসিএস নামক পরিক্ষা মাধ্যমে সেই পদে চাকরি করছেন। 

একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো, বিসিএসে প্রশাসন, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে পর্যটন বিষয়ক পদ থাকলেও সেটা সবাই বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে অর্জন করছেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যটন বিষয়ক একটি করে পদ থাকে, সেখানেও বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের চাকরিগুলোতে সবাই আবেদন করতে পারেন।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আর এই উন্নয়নের ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে চাই পর্যটন খাতে সঠিক ব্যবস্থাপনা। আর এই সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন সঠিক মানুষ বা কর্মী। বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রিক যে পদগুলো রয়েছে, সেগুলোতে পর্যটন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন দেওয়া প্রয়োজন। কারণ একজন পর্যটন বিষয়ক শিক্ষার্থী যে পরিমাণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, ওই একই পরিমাণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের অন্তত তিন বছর লাগবেই। তাহলে চাকরিতে অবস্থান করে তারা কি তিন বছর ধরে পর্যটন বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে?

পর্যটন খাতের পদগুলো পর্যটন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশও একদিন এগিয়ে যাবে। এমনও হতে পারে  বাংলাদেশ একদিন পর্যটন নির্ভর দেশ হবে। আর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষ জনবল। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়