ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতাকারী অংশ নেওয়ায় পরীক্ষা বয়কট সহপাঠীদের
চবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
জান্নাতুল ফেরদাউস মুন্নী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় পরীক্ষা বয়কট করেছেন তার সহপাঠীরা। রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনের বিরোধীতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত জান্নাতুল ফেরদাউস মুন্নী ওই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিনের এ পরীক্ষায় জান্নাতুল ফেরদাউস মুন্নী অংশ নিলে তাকে দেখে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে যান তার সহপাঠীরা। পরবর্তীতে মুন্নী যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সে জন্য প্রক্টর অফিসে লিখিত দেন তারা। এছাড়া, মুন্নী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন নেতিবাচক পোস্ট-কমেন্ট করেছিলেন মুন্নী। এ জন্য আন্দোলনের সময় তাকে বিভাগ থেকে বয়কট করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। রোববার ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ওই বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুন্নী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়ে পরীক্ষা না দেওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ওই বিভাগে মুন্নীর মতো আরও কয়েকজন আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও পরে তারা ক্ষমা চাইলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যায়। কিন্তু মুন্নী ক্ষমা চেয়ে অনুতপ্ত না হয়ে বরং উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেছেন।
বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আশিক বলেন, কোটা সংস্কার থেকে ফ্যাসিস্ট পতনের জন্য যখন আমরা আন্দোলন করছিলাম, তখন আমাদের সহপাঠী মুন্নী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং গণহত্যাকে সমর্থন জানান। আন্দোলনের সময় তাকে বিভাগ থেকে বয়কট করেছিলাম। কিন্তু তিনি এখনও ক্ষমা না চেয়ে উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করছেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তিনি পরীক্ষা দিলে আমরা দেব না। তিনি পরীক্ষা দিতে আসায় আমরা আজ প্রথম পরীক্ষা বয়কট করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জান্নাতুল ফেরদাউস মুন্নী বলেন, আমি শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলাম। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে টিয়ার গ্যাসে আহত হয়েছিলাম। হাইকোর্ট থেকে যখন কোটার নতুন রায় দেয়, তখন আমি আন্দোলন থেকে বের হয়ে পড়ি। এরপর আমি একটা পোস্ট করি, ‘কোটার বিপক্ষে ছিলাম, কিন্তু এখন যেটা চাচ্ছেন সেটার পক্ষে না।’ এ পোস্টের কারণেই তারা আমাকে বিভাগে বয়কট করে। আজ পরীক্ষা দিতে গেলে আমার সহপাঠীরা হল থেকে বের হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি পরীক্ষা দিতে চাই। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। শিক্ষকদের কাছে আমি সবকিছু বলেছি। তারা আমাকে যথেষ্ট কো-অপারেট করেছে। যা করেছে শিক্ষার্থীরাই করেছে। বিভাগ থেকে লিখিত আকারে যদি আমাকে পরীক্ষা দিতে না বলে, সেটা আমি গ্রহণ করবো এবং পরে অ্যাকশন নেব।
বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম বলেন, মুন্নী পরীক্ষা দিতে আসায় অন্যরা পরীক্ষা দেয়নি। তারা প্রক্টর অফিসে এ সম্পর্কে একটা লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছে। আমরা আগামী পরশুদিন এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
/মিজান/মেহেদী/