ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

নতুন উপাচার্যের কাছে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

মো. ইমদাদুল ইসলাম, যবিপ্রবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ২২ অক্টোবর ২০২৪  
নতুন উপাচার্যের কাছে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়ে পরবর্তীতে ছাত্র জনতার এক দফা দাবিতে শুরু হয় স্বৈরাচারী সরকারের পতনের ডাক। এর‌ই পরিপ্রেক্ষিতে হাজারও শিক্ষার্থীর রক্তের বিনিময়ে গত ৫ আগস্ট পতন হয় স্বৈরাচারী সরকারের। স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে এর দোসরদেরও পদত্যাগের দাবি ওঠে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তেমনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ২১ আগস্ট পদত্যাগ করেন তৎকালিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো, আনোয়ার হোসেন । 

প্রায় এক মাসের বেশি সময় পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ। নতুন উপাচার্য পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নতুন করে আবার সবকিছু ভাবতে শুরু করেছেন তারা। নতুন উপাচার্যের কাছে তাদের প্রত্যশাও অনেক। রাইজিংবিডি ডটকমের কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের এ প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে হোক জিরো টলারেন্স

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বাজেট বাস্তবায়ন এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসহ সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন চাই। মেধা, যোগ্যতা ও রিকোয়্যারমেন্টসের ভিত্তিতেই সব নিয়োগের বাস্তবায়ন করতে হবে। দলীয় ভিত্তিতে অগ্রাধিকার কোনোভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দাবি-দাওয়া পেশের সুযোগ ও যথাযথ বাস্তবায়ন চাই। 
(লেখক: জালিস মাহমুদ, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগ)

শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা হলো একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের অ্যাকাডেমিক ও ব্যক্তিগত বিকাশের সর্বোচ্চ সুযোগ পাবেন। শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি ও ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্ভাবনী শিক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা থাকবে। এজন্য আমাদের প্রয়োজন যথেষ্ট সংখ্যক যোগ্য শিক্ষক, আধুনিক গবেষণাগার ও সুসজ্জিত লাইব্রেরি ।
(লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন, শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ)

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেতে হবে

বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে যে অনেক শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসের ভিতরে অবাধেই ধূমপান করছে। এ বিষয়ে তারা কাউকে তোয়াক্কাই করছে না। ফলে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীই তাদের প্রভাবে আস্তে আস্তে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং সার্বিক পড়ালেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব সরকার কর্তৃক প্রণীত ২০০৫ সালের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়া আমাদের হলগুলোর ডাইনিংয়ের খাবারের মূল্য বাহিরের হোটেলগুলোর সঙ্গে বরাবরই টেক্কা দিচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় খাবারের মান পাচ্ছি না। ফলে আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বাধ্য হয়ে বাইরের হোটেলে খাচ্ছি। উপাচার্যের কাছে দাবি, যাতে তিনি হল প্রাধ্যক্ষ স্যারদের সঙ্গে আলোচনা করে সুলভ মূল্যে উন্নত মানের খাবার নিশ্চয়ন করেন।
(লেখক: মুর্তজা বশির, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, ফিশারীজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স)

রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই

ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকার প্রভাব যে কি হতে পারে, তা ইতোমধ্যেই আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি। এজন্য আমরা এক‌ই ভুল আবারও হতে দিতে পারি না। সুতরাং আমাদের সব শিক্ষার্থীদের এখন চাওয়া, একটি সুন্দর রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের। এর আগে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো যত নির্যাতন ও অনিয়ম করে গেছেন, আমরা চাই না আবার কোনো ধরনের রাজনৈতিক দল এখানে আসুক এবং আবারও শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটাক। আমি চাই রাজনীতি মুক্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল নিরাপদ একটি ক্যাম্পাস। যেখানে সবাই মুক্তভাবে চলাফেরা করবে ।
(মো. জুয়েল রানা, শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ)

গবেষণা খাতকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে

আমরা জানি, যবিপ্রবি একটি গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। এজন্য নবনিযুক্ত উপাচার্য স্যারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তিনি যেন শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে আরও উৎসাহ প্রদান, গবেষণার সুযোগ তৈরি এবং এর পিছনে পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিকল্পিত শিক্ষা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক বা আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম উন্নয়নে গবেষণাগার, লাইব্রেরি ও অন্যান্য শারীরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবেন।
(লেখক: মো. মাসুম বিল্লাহ, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ)

অবিলম্বে ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে হবে

ক্যাফেটেরিয়া হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির প্রতীক, যা বিশ্ববিদ্যালয়টির সৌন্দর্য বহন করে। কিন্তু অনেক দিন ধরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাফেটেরিয়া অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা চাই আমাদের ক্যাফেটেরিয়া যত দ্রুত সম্ভব সচল করা হোক, যাতে আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে পারি। তাছাড়া আমাদের নাস্তা করা বা শুকনো খাবার খাওয়ার জন্য ক্লাসের বাহিরে অনেকটা দূরে যাওয়া লাগে। ক্লাসের চাপে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না, যা আমাদের জন্য খুবই ভোগান্তির। সুতরাং আমাদের ক্যাম্পাসের ভিতরেই যদি কোনো শুকনো খাবার দোকানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমাদের জন্য এটা অনেক ভালো হয়। 

আশা করি, অভিভাবক হিসেবে উপাচার্য স্যার আমাদের এ দাবিগুলো আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করবেন।
(লেখক: স্বর্ণালী বিশ্বাস, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ)

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়