ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৮ ১৪৩১

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আনন্দ মিছিল

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২৪ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৮:২২, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আনন্দ মিছিল

আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের খবরে থাকছে বিস্তারিত-

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ৩টায় কুবির গোল চত্ত্বরে আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘ছাত্রলীগ গর্তে, খুনি হাসিনা ভারতে’, ‘ছাত্রলীগ জঙ্গি, খুনি হাসিনার সঙ্গী’, ‘হই হই রই রই, ছাত্রলীগ গেলি কই, গুণ্ডালীগ গেলি কই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় আনন্দ মিছিল করেছে জাবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবন, বটতলা এলাকা হয়ে রবীন্দ্রনাথ হলের সামনের চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও মিষ্টি বিতরণ করেন।  

আনন্দ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘হই হই রই রই, ছাত্রলীগ গেল কই’, ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘ছাত্রলীগের চামড়া, তুলে নিবো আমরা’, ‘ছাত্রলীগের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘একটা দুইটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’  প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)

বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন চবি শিক্ষার্থীরা। 
এ সময় ‘এই মুহুর্তে খবর এলো’, ‘ছাত্রলীগ মা রা গেলো’, ‘হৈ হৈ রইরই, ছাত্রলীগ গেলি কই’, ‘পালাইছে রে পালাইছে, ছাত্রলীগ পালাইছে’, ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গী, ছাত্রলীগ জঙ্গী’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)

বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরই আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। এরপর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দিয়ে আবার হলে ফিরে মিছিল শেষ করেন।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘সন্ত্রাসী লীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘ক্যাম্পাস সন্ত্রাসমুক্ত হলো’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহকে উদ্দেশ্য করেও ব্যঙ্গাত্মক স্লোগান দিতে শোনা যায় শিক্ষার্থীরা।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)

বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক ও ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্নান হলের সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের ১২তলা ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।

রাজশাহী‌ কলেজ

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে রজনীকান্ত সেন মঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা মিষ্টি বিতরণ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা আনন্দিত। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি শিক্ষাঙ্গনে নানা ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। হত্যা, নির্যাতন, সিট বাণিজ্য ও যৌন হয়রানির মতো অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা চেয়েছিলাম পুরো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক। তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াও আমাদের আন্দোলনের অন্যতম একটি সফলতা।

উল্লেখ্য, বুধবার (২৩ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

যেহেতু ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়