ঢাকা     সোমবার   ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ১২ ১৪৩১

ড্যাফোডিলে বিতর্কের সমাপনী

‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র চর্চা জরুরি’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৪:০৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র চর্চা জরুরি’

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র চর্চা জরুরি বলে মত দিয়েছেন আলোচকরা। ‘শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র: তারুণ্যের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক নীতি আলোচনায় বক্তারা এ মত দেন।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব (ডিআইইউডিসি)-এর আয়োজনে তিন দিনব্যাপী ‘আমিও জিততে চাই ডিআইইউডিসি বিতর্ক মহাযজ্ঞ ১৪৩১’-এর সমাপনী আয়োজনের অংশ হিসেবে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) সাভারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে এই আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল পর্যায়ের ৬৪টি বিতর্ক দল অংশ নেয়। 

বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর বিতার্কিক দল। অপরদিকে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে বিএএফ শাহীন কলেজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা কলেজের বিতার্কিক দল।

ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ছাড়াও দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা ও ক্যাম্পাসে নাট্য প্রদর্শনী ও আলোচনার মাধ্যমে নাগরিক প্রত্যাশা তুলে ধরতে বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে। www.amiojittechai.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকদের দাবি প্রকাশের ব্যবস্থা রয়েছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাহফুজ মিশুর পরিচালনায় নীতি আলোচনায় সংবাদ উপস্থাপক, আইনজীবী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন বলেন, শিক্ষাঙ্গন থেকেই বোঝা যায় একটি দেশের গণতন্ত্র কেমন হবে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান, সব দাবি আদায়ের আন্দোলনের সূচনা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকবেই, তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিশ্চিত করতে হবে সব ধরনের মত যেন শিক্ষার্থীরা নিঃসঙ্কোচে প্রকাশ করতে পারে। একইসাথে দেশ সংস্কারের স্বার্থে সকল মতাদর্শের শিক্ষার্থী-জনগণকে এক হতে হবে।

সেইসঙ্গে, শিক্ষার্থীদের গবেষণাকর্মে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে গবেষণায় অর্থায়ন ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সাথে গবেষণা করছে। আমরা যদি গবেষণার সুযোগ তৈরি করে দেই, তবে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশেই গবেষণা করতে পারবে।

এসময় যমুনা টিভির অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আঞ্জুমান নিকোল বলেন, গণতন্ত্র চর্চার জায়গা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে শুরু হয় না; গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হয় একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে। আমাদের স্কুলগুলোতে যখন ক্যাপ্টেন নির্বাচন হয়, সাধারণত সেখানে ভালো ফলাফলধারী কিংবা শিক্ষকদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটা যদি ভোটের মাধ্যমে করা যায়, তাহলে স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে থাকবে। ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থী মাত্রই ভালো নেতা হতে পারে না। তিনি দেশের উন্নয়ন ও সংস্কারের স্বার্থে দল-মত-লিঙ্গ-ধর্ম নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীকে এক কাতারে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। 

শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করতে হলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল। তিনি বলেন, সাধারণত শিক্ষাঙ্গনে দেখা যায় যে, কারিকুলাম প্রণয়নসহ বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের কাজটি শুধুমাত্র শিক্ষক ও অন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ করে থাকে, সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নেই। গণতন্ত্র চর্চা শক্তিশালী করতে হলে শুধু শিক্ষাঙ্গনই নয় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় শিক্ষার্থীদের যুক্ত থাকতে হবে। নিজেদের অধিকার ও দাবি-দাওয়া বুঝে নিতে হবে। 

সেইসঙ্গে, ছাত্র-সংসদ সক্রিয় করার প্রতি জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করতে হবে।

এসময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাঊস বলেন, দাবি ও অধিকার আদায়ের জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শক্তিশালী ইউনিটি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথষ্ক্রিয়া জোরদার করতে হবে, যাতে পরস্পর সহযোগিতামূলক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে। এছাড়া সাংস্কৃতিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যম ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দক্ষতা তৈরি করার প্রতি জোর দিতে হবে। 

তিনদিনব্যাপী উৎসবে সংসদীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩২টি স্কুল পর্যায়ের দল সাতটি রাউন্ডে অংশ নেয়। এই আয়োজনে ছিলো জেন্ডার বিষয়ে থিম্যাটিক কর্মশালা, ইন্টারেক্টিভ থিয়েটার পারফরম্যান্স, ভিডিও বার্তা তৈরি ও কুইজ প্রতিযোগিতা।

বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি ডানা এল. ওল্ডস। এসময় তিনি বলেন,  বাংলাদেশের এই প্রজন্ম খুবই উদ্দীপিত এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতি প্রবল আগ্রহী। আগামীর বাংলাদেশ আপনাদের হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ‘আমি জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারুণ্যের মতামত ও চিন্তা প্রসার করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সমাপনীতে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি লেসলি রিচার্ডস। ইউএসএআইডি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পলিটিক্যাল প্রসেস অ্যাডভাইজার লুবাইন চৌধুরী মাসুম এবং ডিআইইউডিসির কনভেনর আফতাব হোসাইন ও ডিআইইউডিসি সভাপতি সাদ আহমেদ সাদী।

হাসান/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়