জাবিতে জুনিয়রদের বিরুদ্ধে সিনিয়রকে বুলিংয়ের অভিযোগ
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষার্থীকে সাইবার বুলিং করার অভিযোগ উঠছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ভুক্তভোগী জাবি প্রক্টর এবং আইন ও বিচার বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ফারহাদুল ইসলাম আইন ও বিচার বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের (৫১ ব্যাচের) শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি এক বছর পিছিয়ে ৫২ ব্যাচের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কাওসার আহমেদ রেজাউল, শেখ রাসেল হলের মাহদি হোসাইন ও মুশফিকুল আলম তমাল, বেগম সুফিয়া কামাল হলের শাহরিন সুহা ও তারিন আহমেদ নিতু, মীর মশাররফ হোসেন হলের রাতুল ইসলাম ফারদিন ও বখতিয়ার উদ্দিন এবং বীরপ্রতিক তারামন বিবি হলের তাইয়েবা মীম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ ২০২২-২৩ সেশনের (৫২ তম ব্যাচের) শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা থেকে ১টা থেকে পর্যন্ত আইন বিভাগের ৫২ ব্যাটের ক্লাস চলছিল। এ সময় ৫২তম ব্যাচের মুশফিকুল আলম তমাল অনুমতি ছাড়া ফারহাদুল ইসলামের ফোনের কথোপকথনের ছবি তুলে মেসেঞ্জার গ্রুপে হেনস্তার উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেন। পরে ফারহাদুল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তমাল এবং তার ব্যাচের সাত বন্ধু-বান্ধবী মিলে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলেন। সেখানে ফরহাদকে যুক্ত করে সাইবার বুলিং ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন অভিযুক্তরা। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী ওই গ্রুপ থেকে বের হয়ে গেলে পুনরায় তাকে গ্রুপে যুক্ত করে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। বুলিং ও গালিগালাজের তথ্য-প্রমাণাদি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এদিকে, প্রক্টর দপ্তর ও বিভাগীয় প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর শুক্রবার (১ নভেম্বর) এ ঘটনা জানাজানি হয়। এ নিয়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ করছেন আইন বিভাগসহ জাবির সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফারহাদুল ইসলাম বলেন, ‘একদিন শ্রেণীকক্ষে অনুমতি ছাড়া তমাল আমার মেসেঞ্জারের কথোপকথনের ছবি তুলে হেনস্তার উদ্দেশ্য মেসেঞ্জার গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়। পরে আমি তার কাছে জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে উল্টো তারা আটজন মিলে মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে সেখানে আমাকে যুক্ত করে এবং সেখানে বুলিং করাসহ নানাভাবে হেনস্তা ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে আমি গ্রুপ থেকে লিভ নিলে তারা পুনরায় আমাকে যুক্ত করে এবং হেনস্তা করে। এ ব্যাপারে আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযুক্ত ফারদিন ইসলাম অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলেছি। তবে সেখানে আমি কোনো গালিগালাজ বা বুলিং করিনি। আমার অন্যান্য বন্ধুরা তাকে গালিগালাজ করেছে এবং নানাভাবে হেনস্তা করেছে।’
বুলিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আমরা শুধু মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে তার কাছ থেকে জবাব চেয়েছি।’ তবে অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে প্রক্টর অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। অফিস থেকে প্রক্টর স্যার বরারব অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী এ বিষয়ে যথাযত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষক এবং ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা উম্মে হাবিবা বলেন, ‘আমরা গতকাল ভুক্তভোগীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বর্তমানে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। স্যার দেশে ফিরলে আমরা অ্যাকাডেমির মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
/আহসান/মেহেদী/