৫ দাবি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জবি শিক্ষার্থীরা
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ তিন দফা ও ইউজিসির পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে গণপদযাত্রা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে ১২ জন প্রতিনিধির একটি দল স্মারকলিপি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে গেছেন বলে জানা ঘেছ।
সোমবার (১১ নভেম্বর) ‘শিক্ষার্থীবৃন্দ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত্ব চত্বরে থেকে এ গণপদযাত্রা শুরু করা হয়। এ গণপদযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে গিয়ে জড়ো হন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমি কে-তুমি কে, জবিয়ান-জবিয়ান’, ‘মুলা না ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস ক্যাম্পাস’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম’, ‘অধিকার না অন্যায়, অধিকার অধিকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনরত জবি শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে অবহেলা বঞ্চিত শিকার হয়েছে। শুরু থেকে আন্দোলন করে সামান্য কিছু পেয়েছে। আজকের এ আন্দোলন বাস্তবায়ন না হলে রাজপথ ছাড়ব না আমরা।’
মাহমুদুল হাসান নয়ন নামে গণিত বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটি মাত্র হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরাণ ঢাকায় হওয়ার কারণে কেমনে টিকে থাকতে হয় আমরা ভালো করে জানি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থাকার পরও পাইলট প্রকল্প আছে। কিন্তু আমাদের দাবি জবিকেও এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
আন্দোলনের সংগঠক একেএম রাকিব বলেন, ‘আমরা আজ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেব। পাশাপাশি তিন কার্যদিবসের সময় দেব।’
মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরে আমরা আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেব। আর পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রাধিকারের বিষয়টি আজই ইউজিসিকে লিখিত দিতে হবে।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে উপস্থিত হয়েছে জবি শাখা ছাত্রশিবির।
জবি শিবির সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে কোনো ন্যায্য আন্দোলনে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষভাবে আজ সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত আছি। সুষ্ঠুভাবে দ্রততার সঙ্গে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। একই সঙ্গে হিট প্রকল্পে জবিয়ানদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- স্বৈরাচারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাতদিনের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসার নিয়োগ করতে হবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা আসতে হবে- সেনাবাহিনীর হাতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা দিতে হবে (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হল), অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার আমলে করা সব অনৈতিক চুক্তি বাতিল করতে হবে, সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণাকৃত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
গত ৩ নভেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে তা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে ৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ি ৪ নভেম্বর দুপুরে তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ অবরোধে আটকা পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।
ওই সময় উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এটা এমন না যে, বললেই কাজ হয়ে যাবে। যা ১২ বছরে হয়নি, সেটা ১২ দিনে সম্ভব না। আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলছি, এটাও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।’
পরে উপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে তাঁতিবাজার থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা হলে. তারা তা প্রত্যাখান করে স্লোগান দিতে থাকে।
পরদিন ৫ নভেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে দেন।
গত ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান ও অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি সুবিধা দেওয়ার জন্য অর্থ সংস্থান নিশ্চিত করতে হায়ার অ্যাডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে ইউজিসি। এই প্রস্তাবনার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এতে করে তাদের দাবিতে নতুন দুটি দফা যুক্ত হয়। নতুন যুক্ত হওয়া দাবি দুটি হলো- সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণাকৃত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সম্পন্নে সেনাবাহিনীকে চান শিক্ষার্থীরা
/লিমন/মেহেদী/