গার্মেন্টস শ্রমিক সান্ত্বনা হত্যার প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
গার্মেন্টস শ্রমিক সান্ত্বনার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ই নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। সেখান থেকে মিছিলটি পুরাতন ও নতুন প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে বটতলা এলাকায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে তারা ‘শ্রমিক হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম’, ‘শ্রমিকের বুকে গুলি কেনো, ইউনুস জবাব দে’, ‘শান্তনা মরলো কেনো, ইউনুস সরকার জবাব দে’, ‘জবাব তোমায় দিতেই হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে’, ‘হত্যাকারী সরকার, মানি না, মানবো না’, ‘হামলাকারী সরকার, মানি না মানবো না’, ‘সরকারের বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো একসাথে’সহ নানা স্লোগান দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূরে তামিম স্রোতের সঞ্চালনায় দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ জেনিচ বলেন, ‘সাভার-আশুলিয়ার শ্রমিকরা যে প্রেরণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণ অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, ফলাফলে তারা পেয়েছেন বুলেট। শ্রমিক একটা রাষ্ট্রের কাঠামোকে সচল রাখে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আগে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আজ নিরাপত্তার অভাবে শান্তনা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এটাকে আমরা রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড বলতে চাই। সরকারকে এর দায় নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করতে হবে।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোমা ডুমরী বলেন, ‘গত সোমবার নৃশংসভাবে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, প্রথম দিকে আমরা তার পরিচয় জানতাম না। তখন আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কি-না সেটা নিয়ে। কিন্তু যখন আমরা জানলাম, তিনি একজন শ্রমজীবী নারী, তখন আমাদের এ উদ্বিগ্নতার কেন নাই হয়ে গেল? যে দেশে এভাবে নারীরা হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের শিকার হয়, সে দেশ কোনোভাবেই এগিয়ে যেতে পারে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। তা-না হলে এর দায় এই সরকারকেই নিতে হবে।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসি বলেন, ‘গত সোমবার সাভারের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাশে একটি নারীর হাত ও মাথা কাটা মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ সরকার হাজারো শিক্ষার্থী ও জনতার রক্তে অর্জিত। এ সরকারকে সব নাগরিকের রক্তের দাম, জীবনের ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনেক নারীরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করছে। এরই মধ্যে নারী শ্রমিক যারা আছেন, তারা আরও বেশি অবহেলিত। তারা না পান বেতন ভাতা, না পান ন্যায্য অধিকার, না পান বসবাস ও জীবন যাপনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ।’
তিনি বলেন, ‘এই গার্মেন্টস নারী শ্রমিককে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তার জন্য আমরা শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের সকল নাগরিকরা গভীর দুঃখ বোধ করছি। অন্তবর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঠিক করুন। পাশাপাশি শ্রমিক উপদেষ্টার কাছে আমাদের দাবি, যে শ্রমিকদের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে, তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিবেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
গত সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে সাভারের বিরুলিয়ার দত্তপাড়া এলাকা থেকে সান্ত্বনা বেগম নামে এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই নারীর স্বামী নয়ন মিয়াকে আটক করা হয়েছে।
/আহসান/মেহেদী/