কুবির হলে আসন বণ্টনে স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ, প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি
কুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে হল পরিচালনা ও আসন বণ্টনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ সময় হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির হোসাইনের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় নজরুল হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এসে তারা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে সেখান থেকে হলে ফিরে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত ১১টার দিকে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ আবাসিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আসন বণ্টন বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত জানান। সেখানে তিনি বলেন, ‘২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এক কক্ষে আটজন করে থাকাবে এবং প্রতিটি বেডে দুজন করে থাকতে হবে। পাশাপাশি যারা নতুন আবাসিকতা নিয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক জরিমানা করা হবে।’
কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই প্রাধ্যক্ষের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে যান এবং প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে উপস্থিত হন হলের কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ ছাড়াই হল প্রাধ্যক্ষ এখানে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কিছু আসন খালি করে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের উঠানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি হল পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের হলে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি।
আবাসিক হলগুলোর সমন্বিত আসন বণ্টন বিষয়ক নীতিমালা থেকে জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর সমন্বিত আসন বণ্টন বিষয়ক ১৬টি নীতিমালা ও শিক্ষার্থীদের হল আবাসিকতা বিষয়ক নয়টি নির্দেশনাবলী প্রকাশ করে প্রাধ্যক্ষ কমিটি। সেখানে জরিমানা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ের উল্লেখ নেই। তবে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের যে সব শিক্ষার্থী পূর্বে হল সংযুক্তি পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে তাদের দ্বৈত আবাসিকতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের যারা এক হলে সংযুক্তি থাকার পরও অন্য হলে অবস্থান করছেন, তাদের নতুন করে সংযুক্ত হলে আবেদন করতে হবে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ও নতুন নীতিমালা অনুযায়ী হলে আসন বরাদ্ধ দেওয়া হবে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরাও এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে বলে জানা গেছে।
হলে খালি থাকা মোট আসনের ৪০ শতাংশ প্রথম বর্ষের, ২০ শতাংশ দ্বিতীয় বর্ষের, ১৫ শতাংশ তৃতীয় বর্ষের, ১০ শতাংশ চতুর্থ বর্ষের, ৫ শতাংশ স্নাতকোত্তরের, ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, খেলোয়াড় কোটায় ভর্তিকৃত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বরাদ্ধ দেওয়া হবে। তবে আসনের চাহিদা অনুযায়ি হল কর্তৃপক্ষ এ বিন্যাস পরিবর্তন করতে পারবেন।
আবাসিক শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন হৃদয় বলেন, ‘আমরা কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই। তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। বর্তমানে তিনি কিছু অবাঞ্ছিত সিদ্ধান্ত আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। ফলে আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সবাইকে ডেকে বলবেন এবং আমাদের সবার মতামত নিবেন। তা-না করে তিনি নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'
তিনি বলেন, ‘ব্যাচভেদে হলের এক রুমে শিক্ষার্থীদের আটজন করে থাকতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ, যা অযৌক্তিক। এছাড়া হলের মেসেঞ্জারে গ্রুপে তার বলয়ে থাকা কিছু শিক্ষার্থীর মাধ্যমে ব্যাচভেদে জরিমানার টাকা ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটি এখন পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এটা একান্তই প্রাধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা।’
হলের আরেক শিক্ষার্থী রাজু মিয়াজি বলেন, ‘প্রাধ্যক্ষ স্যার আমাদের ছোট রুমে আটজন করে থাকতে বলেছেন, যা সম্ভব না। আটজন করে থাকলে রুমে দম বন্ধ হয়ে আসবে। প্রাধ্যক্ষ স্যার নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে তার বিভাগের শিক্ষার্থী দিয়ে আমাদের হলের গ্রুপে ম্যাসেজ দেওয়াচ্ছেন। প্রাধ্যক্ষ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই তিনি ব্যাচভেদে ১ হাজার ও ৫০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা জানান। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অযৌক্তিক। আমরা তার এ সব অযৌক্তিক দাবি মানবো না। আমরা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করছি।’
অভিযোগের ব্যাপারে কাজী নজরুল হলের প্রাধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির হোসাইন বলেন, ‘আমাদের হল প্রাধ্যক্ষদের মিটিংয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা আমি আগে আগেই আমার হলের শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছি। যেখানে অন্য হলের প্রাধ্যক্ষদের কিছুদিন পরই তাদের হলগুলোতে জানানোর কথা। এখানে বিভাগের স্বজনপ্রীতির কোনো বিষয়ই নেই। হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছে।’
জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত যে সব শিক্ষার্থী হলের আবাসিকতা না নিয়ে দীর্ঘদিন হলে অবস্থান করেছে, তাদের আবাসিকতা নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তারা কতদিন ধরে হলে থাকছে সে হিসাব অনুযায়ী ৫০০ ও ১০০০ টাকা করে হল অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা জমা দিতে হবে।’
পদত্যাগের দাবীর বিষয়ে তিনি জানান, ‘এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। যদি মনে হয় আমি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারছি না, সেদিন আমি নিজেই চলে যাব।’
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী