রাষ্ট্রীয় আইন উপেক্ষা করে জাবিতে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, ক্ষোভ
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এ রাষ্ট্রীয় আইন উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ৪৪তম ব্যাচের র্যাগ ডে উপলক্ষে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রিয়েল ডায়মন্ড স্পন্সর করে।
স্পন্সরশিপের চুক্তি অনুসারে কোম্পানিটি তাদের তামাকজাত পণ্যের প্রচারে পোস্টার, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে ছেয়ে ফেলে পুরো ক্যাম্পাস। এতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাবির সচেতন শিক্ষার্থীরা।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ ধারা ৫ এর ‘ক’ উপধারায় বলা হয়েছে, “প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না, বা করাবেন না।”
ওই আইনের ‘গ’ উপধারায় বলা হয়েছে, “তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বা তার ব্যবহার উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো দান, পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান বা কোনো অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার (স্পন্সর) বহন আদান প্রদান করা যাবে না।”
এ আইন অমান্য করলে শাস্তি হিসেবে আইনের ধারা ৫ এর ‘৪’-এ বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি এ ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে, তিনি অনুর্ধ্ব তিনমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনরায় একই ধরনের অপরাধ করলে, তিনি পর্যায় ক্রমিকভাবে ওই দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।”
জানা গেছে, জাবির ৪৪ ব্যাচের র্যাগ ডে উপলক্ষে গত ১৪ ও ১৫ নভেম্বর এ দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে স্পন্সর করে তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রিয়েল ডায়মন্ড। র্যাগ অনুষ্ঠানের শেষদিন শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত কনসার্টে আসিফ আকবর, তানজির তুহিন, এভয়েড রাফা সহ স্বনামধন্য অনেক শিল্পী সংগীত পরিবেশন করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন এলাকায়, বটতলার প্রতিটি খাবারের দোকানে, আবাসিক হলগুলোর সামনেসহ পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ‘রিয়েল ডায়মন্ড প্রেজেন্টস শিক্ষা সমাপনী-৪৪’ শিরোনামে সিগারেট কোম্পানিটির পোস্টার, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে ছেয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪তম ব্যাচের র্যাগের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ওই কোম্পানি তাদের প্রচারণা চালায়। আবার কয়েকটি জায়গায় তাদের ব্যানারে মুক্তভাবে বসে তামাকজাত দ্রব্যের স্টল। তবে র্যাগ ডে এর অনুষ্ঠান শেষ হলেও সরানো হয়নি প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টার, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ড।
জাবির একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তামাকজাত দ্রব্যের প্রচারণা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশাসনের উচিত ছিল এ বিষয়টি আমলে নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। দেশের প্রথম সারির বিদ্যাপীঠ থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা এ ধরনের ব্যবস্থাপনা কখনোই আশা করিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর ইবনে মোবারক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো কোম্পানির অধীনে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। এখানে কোম্পানি কি নামে প্রচার প্রচারণা করলো, সেটি মূখ্য নয়। এখানে ওই কোম্পানির ব্যানারে তামাকজাত দ্রব্য স্বল্পমূল্য বিক্রয় করাকে কোম্পানি তামাকজাত দ্রব্যের নয় বলে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বিজ্ঞাপন ও বিনামূল্যে, স্বল্পমূল্যে বিক্রি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এ ধরনের বিজ্ঞাপন ও স্বল্পমূল্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি শিক্ষার্থীদের এর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আফনান বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই দেশব্যাপী জাহাঙ্গীরনগরের অনেক নেতিবাচক প্রচারণা আছে। সে ক্ষেত্রে আয়োজকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অনুষ্ঠানে সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি ধূমপানে উৎসাহী হবে। আর বাংলাদেশের আইনেও তা নিষিদ্ধ। এজন্য প্রশাসনের উচিত আয়োজকদের কাছে সঠিক কৈফিয়ত চাওয়া।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে জানার পরপরই অনুষ্ঠানের আহ্বায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্টলগুলোকে সরিয়ে ফেলতে বলি। কিন্তু তারপরও এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য না। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেব এবং পরবর্তীতে সোচ্চার থাকব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করা হয়নি। আমরা চেষ্টা করব যাতে ধরনের ঘটনা পরবর্তীতে না ঘটে।’
ঢাকা/আহসান/মেহেদী