ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১

ইবির ৪৬-এ পদার্পণ: সংগঠকদের ভাবনা, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

তানিম তানভীর, ইবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ২২ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৮:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০২৪
ইবির ৪৬-এ পদার্পণ: সংগঠকদের ভাবনা, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলো কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে।

তারই লক্ষ্যের পানে ছুটতে বর্তমানে আটটি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগে অন্তত ১৬  হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। যেখানে জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের উপযোগী সৎ, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, বিজ্ঞানমনস্ক, সৃজনশীল, অসাম্প্রদায়িক, উদারনৈতিক, মানবমুখী, দূরদর্শী ও প্রগতিশীল নাগরিক হওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন  সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশবাদী সংগঠনে কাজ করছেন একঝাঁক সংগঠক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাইজিংবিডির কাছে সে সব সংগঠকরা তাদের ভাবনা, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীবান্ধব বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে তোলা হোক
আজ ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে কখনোই নিজের অবস্থান জানান দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আবাসন সংকট, পরিবহন সমস্যা, যুগোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণার অভাব, মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি বৃদ্ধি, হলে নিম্নমান সম্পন্ন খাবার, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হৃদ্যতার অভাব জাতীয় পরিসরে অনেক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতেও ইবিকে পিছিয়ে রাখছে।

দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক মেইলের বন্দোবস্ত, সেশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, স্বল্প বিরতিতে নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন, নিজেদের প্রকাশিত জার্নালে শিক্ষার্থীদের লেখা প্রকাশের ব্যবস্থা এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক,স্বেচ্ছাসেবী ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনগুলোর উন্নয়নে বাজেট প্রদানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত বাংলাদেশে প্রকৃত শিক্ষার্থীবান্ধব বিদ্যাপীঠ হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে শীঘ্রই  গড়ে তোলা হবে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: এস এ এইচ ওয়ালিউল্লাহ, সভাপতি, ল’ অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড এনলাইটেন্ড সোসাইটি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রযুক্তি নির্ভর ক্যাম্পাস চাই
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও এখনও এনালগ প্রযুক্তি কিছুতেই পেছন ছাড়ছে না। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত ও স্মার্ট ক্যাম্পাস হয়ে উঠছে, সেখানে শুধু টাকা জমা দেওয়ার জন্যই চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় এর শিক্ষার্থীদের। এমনকি সব হলগুলোতে নেই আধুনিক পরিচয় পত্র।

একইভাবে প্রযুক্তির ছোঁয়া পায়নি লাইব্রেরি, মেডিক্যালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা শাখা। এটা আধুনিক যুগ হিসেবে বড়ই বেমানান ও দুঃখজনক। এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার প্রত্যাশা থাকবে, পেমেন্ট সিস্টেমসহ সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ছোঁয়া পাবে ইবি এবং লড়বে বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে উন্নতির শিখরে যাওয়ার প্রতিযোগিতায়।

লেখক: দিদারুল ইসলাম রাসেল, সভাপতি, রোটার‍্যাক্ট ক্লাব অব ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সাংস্কৃতিক বাজেটে সামাজিক সংগঠনকে অংশীদার করা
৪৬ বছরের পদার্পণের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশবাদী  সংগঠনগুলো বিভিন্নভাবে নিগৃহীত। কেননা এ সংগঠনগুলো যখনই কোনো প্রোগ্রাম করতে যায়, তখনই প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংস্কৃতিক বাজেট থাকা সত্ত্বেও এ সংগঠনগুলো তার অংশীদার হতে পারেনি। প্রশাসন থেকে যদি সামাজিক সংগঠনগুলোকে ষান্মাসিক বা বাৎসরিক সাংস্কৃতিক বাজেট দেওয়া যায়, তাহলে তারা তাদের কার্যক্রমকে আরও বেগবান রাখতে পারবে।

পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির যুগে সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে কোনো ওয়েবসাইট নেই। প্রশাসনের উদ্যোগে যদি হোস্টিং বা ডোমেইন দিয়ে এ সংগঠগুলোর আলাদা কোনো ওয়েবসাইট তৈরির ব্যবস্থা করে, তাহলে তারা ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। এতে বাইরের স্পন্সরশিপ প্রাপ্তি ও সংগঠনের কাজের স্বচ্ছতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনায় টিএসসিসির অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত জায়গার জন্য বারবার দাবি জানিয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পথচলায় যেন এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।

লেখক: নাহিদুর রহমান, সভাপতি, বুনন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন করা হোক
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যা দেশের শিক্ষাবিস্তারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। মানসম্মত শিক্ষা, গবেষণার প্রসার এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু সমাবর্তন আয়োজনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ৪৫ বছরের ইতিহাসে ইবিতে এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে চতুর্থ সমাবর্তন হয়। ফলে হাজারো শিক্ষার্থী তাদের অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন।

সমাবর্তন কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়। এটি একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি এবং কর্মজীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি যেমন এক অনন্য অর্জন, তেমনি এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও গৌরব। তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি প্রদানসহ কর্মজীবনের জন্য তাদের প্রস্তুতকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ার কারণে অনেককে মূল সনদের পরিবর্তে সাময়িক সনদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হতে হচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন উদ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রায় শিক্ষার্থীদের একান্ত প্রত্যাশা, খুব দ্রুত পঞ্চম সমাবর্তনের এবং নিয়মিত সমাবর্তনের ধারা চালু করা।

লেখক: মশিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক, কাম ফর রোড চাইল্ড, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়