শিক্ষার্থীদের সংঘাত: সাত কলেজের পরীক্ষা স্থগিত
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের (২৬ নভেম্বর) চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে শহিদ সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল ব্যতীত বাকি কলেজগুলোর ক্লাস রুটিন অনুযায়ি চলবে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২০২৩ সালের চতুর্থ বর্ষের স্নাতক পরীক্ষার সময়সূচি থেকে মঙ্গলবারের (২৬ নভেম্বর) পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হলো। স্থগিত করা পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি শিগগির ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া পূর্বঘোষিত সময়সূচির অন্যান্য পরীক্ষা অপরিবর্তিত থাকবে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ ক্যাম্পাসে হামলায় অবকাঠামোগত বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। আর এ কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে যে ক্ষতি হয়েছে, সেখানে ক্লাস করার পরিস্থিতি নেই। সব কলেজে একই পরীক্ষা। একটি কলেজে পরীক্ষা না নেওয়া গেলে সাতটি কলেজের পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হবে।”
এদিকে সংর্ঘের ঘটনায় শহিদ সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও কলেজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) কবি নজরুল সরকারি কলেজের শ্রেণি পাঠদান বন্ধ থাকবে।’
এছাড়া, গতকাল রোববার (২৪ নভেম্বর) সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত ২৫ ও ২৬ নভেম্বর কলেজের সব শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামীকাল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাশ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী কলেজের ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেছে।”
তবে সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়ের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার গত ১৬ নভেম্বর সকালে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১৮ নভেম্বর রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় ২০ ও ২১ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, এ দুদিন ন্যাশনাল মেডিক্যালের পক্ষ নিয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এ হামলাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে ‘ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ’ নামে একটি গ্রুপে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে ও আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রোববার (২৪ নভেম্বর) ঢাকার ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও করে। এ সময় তাদের সঙ্গে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে সাংবাদিকসহ ২০ জনের বেশি আহত হন। এদিন সোহরাওয়ার্দী কলেজে আন্দোলনকারী ব্যাপক ভাঙচুর চালান।
ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালিয়েছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী কলেজ ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। তাদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে গেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে, সেনা সদস্যরা অন্য শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে কলেজ ভবনে ঢুকতে পারেননি। এ সংঘর্ষে শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা/লিমন/এনএইচ/মেহেদী