ভারত কোনদিন দেশে আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে না: হাসনাত
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান ছাত্র সংগঠনগুলোর
বাংলাদেশে আর কোনদিন ভারত আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাংবাদিক জোটের আয়োজনে দেশের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের নিয়ে ‘বিপ্লবোত্তর ছাত্র-ঐক্য’ আলোচনা সভা তিনি এ কথা বলেন। এছাড়া আগামীর বাংলাদেশে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছে দেশের ছাত্র সংগঠনগুলো।
এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “ফ্যাসিস্টদের আর কোন ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না। এবার যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে বাংলাদেশ আর কোনদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মৌলিক মতপার্থক্য থাকবে, এটা হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু এ দেশের অখণ্ডতা, বিদেশি আগ্রাসন, সার্বভৌমত্ব- এসবের প্রশ্নে কোন আপোষ চলবে না। সবাইকে একমত হতে বাধ্য করা, এটি হচ্ছে শেখ হাসিনিও (আওয়ামী) কালচার।”
তিনি আরও বলেন, “মতপার্থক্য পরমতসহিষ্ণুতার মধ্যে থাকতে হবে। আমাদের দ্বিমত প্রকাশ থাকবে, সেটা যেন সৌন্দর্যের কালচারের মধ্যে থাকে। সেটি যেন আওয়ামী লীগের দমন পীড়নের মতো করে না হয়।”
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনারা যারা ভারতের পলিসি মেকার আছেন, মালদ্বীপকে বশ্যতা স্বীকার করাতে পারেননি, শ্রীলঙ্কাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। নেপালের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। ভুটান আর মায়ানমারের সাথে আপনাদের কোন্দল। পাশ্ববর্তী কোন দেশের সাথে আপনাদের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক নেই।”
তিনি বলেন, “ভারতের সাথে আমাদের কোনো ধমীয় কারণে সম্পর্কের অবনতি হয়নি। তাই যদি হতো, তাহলে নেপালে ৮১ শতাংশ হিন্দু হওয়ার পর তাদের সাথে আপনাদের ভালো সম্পর্ক নেই? এখন থেকে ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা হবে, সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমাদের মধ্যে যতদিন ঐক্য আছে, তত দিন আমাদের মধ্যে কেউ বিভেদ তৈরি করতে পারবে না। আমাদের সামনে অনেক রাস্তা অতিক্রম করতে হলে, সেই পথ অনেক বেশি কণ্টকাকীর্ণ। আমাদের মধ্যে ঐক্য রাখতে হবে।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটিতে আজ এ ছাত্র ঐক্য প্রচেষ্টার মিলনমেলায় বলতে চাই, জগন্নাথ যতদিন থাকবে বিশ্বজিৎ থেকে সাজিদ, সবাইকে মনে রেখেই চলতে হবে। আগামির বাংলাদেশে কেউ যেন অপকর্মে লিপ্ত না হই। যারা অপপ্রচারে লিপ্ত হই, তাদের ছাত্রলীগের মতো বিবেচনা করা হবে। যেহেতু প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র রয়েছে, তাই তার বিরুদ্ধে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা অচিরেই জাতীয় নির্বাচনের রুপরেখা চাচ্ছি। জাতীয় সরকারে মাধ্যমেই খুনি হাসিনার কাছে স্পষ্ট বার্তা যাবে। রুপরেখা দানের মাধ্যমেই বর্তমানের পরিস্থিতি ৮০ শতাংশ নিরসন হবে। যারা আজও প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখে, সোস্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারে লিপ্ত, তাদের সংস্কার করা হচ্ছে না কেন? সরকারের দায়িত্ব হলো ছাত্রদের পড়ালেখা নিশ্চিত করা। যদি কোথাও বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়, তাহলে সেখানে ছাত্রদের কেন যেতে হবে?
শিক্ষার সংকটকে দায়ি করে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সঙ্কট হলো শিক্ষার সঙ্কট। শিক্ষার যদি সংস্কার না হয়, তাহলে বারবার দিল্লীর আনুগত্য মেনে নিতে হবে। তাই শিক্ষার সংস্কার জরুরি। শিক্ষায়, ছাত্র রাজনীতিতে নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে। আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি হতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের এজেন্ডা হওয়া উচিত ছাত্রদের অধিকার আদায়ে। এজেন্ডা যদি ছাত্রদের বাইরে হয় এবং ছাত্রলীগের মতো রাজনীতি থেকে বের হতে না পারলে, সেটা ছাত্ররা গ্রহণ করবে না। আর যদি ছাত্রদের অধিকার নিয়ে রাজনীতি করা হলে সেটা ছাত্ররা গ্রহণ করবে। সাড়ে ১৫ বছরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার অধিকার, নাগরিকের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা যদি আমাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন না হই, তাহলে আমাদের বারবার আগস্টের মতো নির্যাতনের শিকার হতে হবে।”
ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ত্রিশ বছরে শুধু ঢাবিতে একটা ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়েছে। ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। আমরা নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে চাই, আর সেটি হবে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের নির্বাচন।”
তিনি পিলখানা হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, “পিলখানা হত্যার বিচার এখনও হয়নি। ৭৪ জনকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। শাপলা চত্বরে যে সব মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা করা হলো, তাদের বিচার করতে হবে। ২৪ সালের গণহত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে ছাত্র জনতার ঐক্য প্রয়োজন।”
এদিকে, উদ্বোধনী বক্তব্যে বিকালে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “বড় আশা ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন দেখার। শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় সেটা সম্ভব হয়েছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, আমাদের বারবার সুযোগ এসেছে। এবার আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
জুলাই আন্দোলনের শহীদ সাজিদের স্মৃতিচারণ করে শহিদ সাজিদের বোন ফারহানা হক বলেন, “আমরা ভিতু মানুষ। আমরা তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করতাম। কিন্তু সে সাহসী মানুষ। সে শুরু থেকেই আন্দোলন করেছে। জুলাই বিল্পবের রক্ত যেন বৃথা না যায়।”
জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান তানভীরের সভাপতিত্বে ও প্রেস ক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আসসাইফের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, জাস্টিস ফর জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব মীর ছিবগাতুল্লাহ তকি, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি নুরুল বাশার আজিজী প্রমুখ।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী