ঢাকা     শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

এবার রাবি অধ্যাপকের বিচার চাইলেন চাকরিচ্যুত চিকিৎসক

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪  
এবার রাবি অধ্যাপকের বিচার চাইলেন চাকরিচ্যুত চিকিৎসক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত রসায়ন ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোসা. সাবিনা ইয়াসমিনের উপযুক্ত বিচার ও চাকরি পূর্নবহালের দাবি জানিয়েছেন যৌন নির্যাতনের অভিযোগে চাকরিচ্যুত ডা. রাজু আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান দন্ত চিকিৎসক ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. রাজু আহমেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র ছাড়াও নগরীর তালাইমারির আমেনা প্রাইভেট ক্লিনিকে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমি প্র্যাকটিস করি। ২০২৩ সালে ৩০ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৬টায় রাবির ফলিত রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোসা. সাবিনা ইয়াসমিন আমার চেম্বারে আসার অ্যাপয়েনমেন্ট চাইলে তাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আসতে বলি। কিন্তু তিনি যথাসময়ে না এসে রাত ৯.৫৩ মিনিটে আমাকে ফোন করে চেম্বারে আসতে চান। তখন চেম্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও তার মেয়ের দাঁতে ব্যাথা হচ্ছে জানালে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমার সহকারীকে দ্বিতীয়বার চেম্বার খুলতে বলি।”

তিনি বলেন, “রাত ১০টার পর চেম্বারে আসেন সাবিনা ইয়াসমিন ও তার মেয়ে। পরে চিকিৎসা প্রদান শেষে আমার সহকারী আবুল কালাম চিকিৎসার ফি চাইলে ড. সাবিনা ইয়াসমিন দুর্ব্যবহার শুরু করেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি প্রতিবাদ জানালে তিনি আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন এবং একপর্যায়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসেন। আমার মাথায় ভারী পেপারওয়েট দিয়ে পরপর দুবার আঘাত করেন। ফলে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তিনি চিৎকার দিয়ে ওনার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েকজন দুর্বৃত্তকে চেম্বারে প্রবেশ করতে বলেন এবং দুর্বৃত্তরা আমার বুকে সজোরে লাথি মারতে থাকে। এছাড়াও আমার চেম্বার ভেঙ্গে তছনছ করে দেন যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক প্রায় দেড় লাখ টাকা।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের আর্তচিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে দূর্বৃত্তদের হাত থেকে উদ্ধার করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ কয়েকজন সহকারী প্রক্টর এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব বিস্তার করে ওই শিক্ষক ড. সাবিনা ইয়াসমিন ও তার সহযোগী হামলাকারীদের নিয়ে চলে যান। এ সময় আমাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গমন করি। এ ঘটনার পরদিন মোসা. সাবিনা ইয়াসমিন নিজেকে রক্ষার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা বর্ণনায় তার বাচ্চা মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মাফীকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দেন এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করান।

ডা: রাজু আরও বলেন, “ড. সাবিনা ইয়াসমিন রাবির বাইরের একটি ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে টেনে এনে ষড়যন্ত্র মূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। রাবি কর্তৃপক্ষ ওই মামলার কারণে কোন কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই গত ৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে আমাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন এবং একপর্যায়ে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে আমাকে চাকরিচ্যুত করেন।”

শিক্ষিকার বিচার চেয়ে তিনি বলেন, “ড. সাবিনা ইয়াসমিন একজন ফৌজদারি মামলার আসামী হয়েও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার নামে মিথ্যা মামলা এবং আমাকে চাকরিহারা করার জন্য আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই। আমাকে চাকরিতে পূর্নবহালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শিক্ষক ড. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “আমি ডা. রাজু আহমেদের নামে মামলা করার ১৩দিন পর তিনিও আমার নামে মামলা করেছেন। আমাকে হয়রানি করার জন্যই মূলত তিনি মামলা করেছেন। এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ জমা দিলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সত্যতা পেয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করেছেন।”

গত বছর ৩০ অক্টোবর রাতে নগরের তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে রাবি শিক্ষক ড. সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়েকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২৬তম সিন্ডিকেট সভায় রাজু আহমেদকে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চাকরিচ্যুত করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে সঠিক তদন্ত ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই বেআইনীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ডা: রাজু আহমেদ। ফলে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রশাসনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশান দায়ের করেন তিনি। ওই রিটে চাকরিচ্যুতির এ আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও দূর্বৃত্তদের নিয়ে ক্লিনিকে হামলার অভিযোগ এনে ড. সাবিনা ইয়াসমিনসহ আরও তিনজনকে আসামি করে কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন ডা: রাজু। যারা মামলা নং- সি.আর-১৩৮৭/২৩ (বোয়ালিয়া)। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়