বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে হেয় করার অভিযোগ
বশেমুরবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসলাম
শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ড. মোহাম্মদ আসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক।
বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, মোহাম্মদ আসলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সর্বদা খারাপ ব্যবহারসহ কথায় কথায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ক্লাসে তাদের বাস্টার্ড, বেয়াদবের বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা, জুতা দিয়ে পেটাব ও লাথি মেরে বিল্ডিং থেকে ফেলে দিবসহ বিভিন্ন খারাপ ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন।
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং এর অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এক শিক্ষার্থী সেমিস্টার ফাইনালের ৬০ নম্বরের পরীক্ষায় সবগুলো কয়টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে লিখে আসলেও তাকে মাত্র ২০ নম্বর দেন ওই শিক্ষক। পরে ওই শিক্ষার্থী এ বিষয়ে তার কাছে গিয়ে নম্বর ইনপুটে ভুল হয়েছে কিনা যাচাইয়ের অনুরোধ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বেয়াদবের বাচ্চা বলে গালিগালাজ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগে চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ তো দূরে থাক, কেউ কিছুই বলতে পারে না। তিনি শিক্ষার্থীদের কথায় কথায় ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘পাশ করে বের হতে দেব না।’ তিনি ক্লাসে সামান্যতেই শিক্ষার্থীদের তুই তুকারী করে হেয় করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে মাঝে ‘পায়ের জুতার তলে নিয়ে পিষে ফেলবো বেয়াদব’ বলেন তিনি।”
তিনি আরও বলেন, “বিভাগের অন্য শিক্ষকরাও তার আচরণের বিষয়ে কিছু বলেন না। তাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। তিনি আমাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দিতে পারেন- এ ভয়ে আমরা কেউ অভিযোগ করার সাহস পাই না।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাস্টার্সের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা একজন শিক্ষক তো দূরে থাক, সাধারণ মানুষও করবে না। আমি অসুস্থ থাকায় ক্লাস করতে পারিনি। এজন্য তিনি আমাকে বলেন, ‘তুমি অসুস্থ থাকো বা আর অন্য যে সমস্যাই থাকুক, তোমাকে ক্লাস করতে হবে।”
মাস্টার্সে পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বাস্টার্ড বলে গালি দেন। এছাড়া জুতা দিয়ে পিটাতে চান। সামান্যতেই তিনি অনেক রাগারাগি করেন। কেউ যদি ক্লাসে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তুমি আমার থেকে বেশি বোঝ, আমি যা বলেছি সেটা দেখ।”
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসলাম বলেন, “তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা বারবার অপরাধ করায় আমি কিছু কথা বলেছি। তারা অনেক সময় আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজিত হয়ে আমি হয়তো কিছু বলেছি। একজন শিক্ষাকের সঙ্গে তারা বারবার ফল্ট করলে আমি কি কিছু বলবো না? একজন যদি বারবার পরীক্ষায় অসৎ পন্থা অবলম্বন করে, তাহলে তাকে এক্স-ফেল কেন করা হবে না?”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের শাসন করার জন্য হয়তো কিছু কথা বলেছি। আপনি আমার বিষয়ে বিভাগের সব শিক্ষার্থীর কাছে খোঁজ নেন। আমি শিক্ষার্থীদের শাসন করেছি, এর বেশি কিছু নয়।”
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বলেন, “আসলে এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারব।”
শিক্ষার্থীরা পাশ করে বের হতে পারবে না, এ ভয়ে তারা অভিযোগ দিতে সাহস পাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা জানাতে চাইলে তিনি বলেন, “এ ধরনের নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, আমি যতটুকু জানি। শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলেই আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি।”
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী