শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দিল নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়
নোবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২৫ শহীদ পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) প্রশাসন।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় শহীদ পরিবারকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এএফএম আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ্-আল-ফারুক, নোবিপ্রবি পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের শাখা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাদের প্রমুখ।
নোবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নোয়াখালী অঞ্চলের শহীদদের বাবা-মা ও আহত নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন।
সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশে একাডেমিশিয়ানরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-উপউপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে ২৪ এর গণ অভ্যুত্থানকে আহত এবং শহীদের আত্মত্যাগের ফলে। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস নতুন প্রাণ ফিরে পাবে, যেখানে কোন ধরনের দখলদারিত্ব থাকবে না, সন্ত্রাস থাকবে না।”
২৪ এর গণ অভ্যুত্থানকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেদিন ঘুরে দাঁড়াবে, সেদিন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। যেখানে অন্যায় দেখবেন, সেখানে সংঘটিত হতে হবে। এতেই সমাজ পরিবর্তন হবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা জীবন বাজি রেখে রাজপথে লড়াই করেছে। এর মধ্যে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে গেছে স্বৈরাচারের গুলির আঘাতে, শত মায়ের বুক খালি হয়েছে, হাজারো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এত এত ত্যাগের লক্ষ্য ছিল একটাই, সুন্দর একটি বাংলাদেশ। যেখানে আমরা মুক্তভাবে প্রাণখুলে নিজেদের অব্যক্ত কথাগুলো নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারবো। যে কথাগুলো হবে, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে এবং শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য, ঘুষ, মাদকসহ সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”
তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেখানে শ্রেণি বৈষম্যের কোনো ঠাঁই নেই। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতিমূলক পরিবেশে বাস করবে। ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রত্যেকের নিজস্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা গুণগত উচ্চশিক্ষা ও মানসম্মত কর্মপরিবেশের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছি।”
দুই পর্বের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা সভা ছাড়াও নোবিপ্রবি বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের উদ্যোগে দেয়ালিকা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের পরিবারবর্গ, আহত শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, ইনস্টিটিউট পরিচালকবৃন্দ, বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, দপ্তর প্রধানবৃন্দসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী